Advertisement (Custom)

প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫
সর্বশেষ সংষ্করণ 2025-03-28T20:45:50Z
মতামত

মধ্যবিত্তের ঈদ : হাসির আড়ালে চাপা দীর্ঘশ্বাস

বিজ্ঞাপন

অলিউর রহমান তামিম : ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব। নতুন কাপড়, ভালো খাবার আর পরিবারের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়। কিন্তু এই আনন্দ কি সবার জন্য সমান? মধ্যবিত্তের কাছে ঈদ মানে বাড়তি দুশ্চিন্তা, নতুন অনিশ্চয়তা। সংসারের ঘানি টানতে টানতে যারা হাঁপিয়ে ওঠে, তাদের কাছে ঈদও এক ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবন এমন এক নাটকের মঞ্চ, যেখানে প্রতিনিয়ত অভিনয় করতে হয়। মুখে হাসি, ভেতরে চাপা কান্না। বাজারে গেলে মাছ-মাংসের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়। ঈদের আগের দিন বাজারে গেলেও পকেটের অবস্থা অনুমান করা যায়, যখন কেজির বদলে ৫০০ গ্রাম মাংস কিনতে হয়, কিংবা ব্রয়লার মুরগির বদলে ডিম কিনে সন্তানের সামনে হাসিমুখে বলতে হয় মুরগির মাংসের চেয়েও ডিম বেশি পুষ্টিকর।

ঈদ আনন্দ নাকি দায়িত্বের ভার? –  ছোট ছেলেটা বাবার কাছে এসে আবদার করে বাবা, এবার নতুন জামা কিনে দিও! বাবা চুপ করে থাকেন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আচ্ছা দেখি, ইনশাআল্লাহ। অথচ বাস্তবতা হলো, মাসের মাঝামাঝি এসে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, নতুন কাপড় কেনার টাকা কোথায় পাবেন?
বছর বছর বাজারদর যেভাবে বাড়ছে, মধ্যবিত্তদের কষ্টও সেভাবে বেড়েই চলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেশি যে, ঈদের খরচ তো দূরের কথা, প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করাই একেকটা যুদ্ধ। চাল,ডাল,তেল, মরিচ,পেঁয়াজের দাম এখন মধ্যবিত্তের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথচ তাদের জন্য নেই কোনো সরকারি ত্রাণ, নেই কোনো বিশেষ সুবিধা। নিম্নবিত্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়, অথচ মধ্যবিত্তরা সাহায্য চাইতে পারে না, মুখ ফুটে কষ্টের কথাও বলতে পারে না।

ঈদের বাজারে অসহায় এক বাবা – ঈদের দুদিন আগে বাজারে গিয়েছিলেন এক বাবা। ছেলের জন্য একটা নতুন জামা কেনার ইচ্ছে ছিল। দোকানে গিয়ে দাম শুনে হতভম্ব হয়ে যান। নিজের পকেটের টাকা গুনে দেখেন, যা আছে তা দিয়ে হয়তো দু'বেলার বাজার হবে, কিন্তু নতুন কাপড় কেনা সম্ভব নয়। মন খারাপ করে যখন বাসায় ফেরেন, ছেলেটা দৌড়ে এসে বলে, বাবা, তুমি আমার জন্য জামা এনেছ?

বাবা ব্যাগটা সন্তানের হাতে তুলে দেন। ব্যাগ খুলতেই দেখা যায়, নতুন জামার বদলে মাত্র দুটি সস্তা প্লাস্টিকের খেলনা গাড়ি। ছেলেটা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু বাবাকে কিছু বলতে পারে না। কারণ, সে জানে, তার বাবার সাধ্য নেই। বাবা মুচকি হেসে বলেন, এটা কিন্তু খুব স্পেশাল গাড়ি, সন্তানের মুখের হাসি ধরে রাখতে গিয়ে চোখের কোনায় পানি জমে, তবে সেটা লুকিয়ে ফেলেন তিনি।

ঈদের দিন মধ্যবিত্ত বাবার আত্মত্যাগ – ঈদের দিন সকালবেলা বাবা নিজের জন্য পুরনো পাঞ্জাবি বের করেন। কেউ যদি বলেন, আপনি এবার নতুন কিছু কেনেননি? তখন হাসিমুখে বলেন, কী দরকার, গত বছরেরটা একবারই তো পরেছি, প্রায় নতুনই রয়েছে, কিন্তু কেউ জানে না, আসলে তিনি পরিবারের খুশির জন্য নিজের সব শখ বিসর্জন দিয়েছেন।

বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ – ঈদের সময় আমরা নিম্নবিত্তদের সাহায্য করতে ছুটে যাই। কিন্তু মধ্যবিত্তদের কথাও ভাবতে হবে। তারা সাহায্য চাইতে পারে না, কিন্তু তারাও কষ্টে থাকে। কেউ হয়তো দিনের পর দিন অভাবের যন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছে, মুখ ফুটে কিছু বলছে না। কেউ হয়তো সন্তানের আবদার পূরণ করতে না পারার কষ্ট বুকে চেপে রেখে হাসিমুখে সংসার চালাচ্ছে।

তাই আসুন, আমরা শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তদের কথাও মনে রাখি। হয়তো আপনার অল্প একটু সহানুভূতিতেই কারও ঈদটা সত্যিকার অর্থেই আনন্দময় হয়ে উঠবে।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ