বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক এক মতবিনিময়ে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন রাজনীতি ও দলীয় প্রতীকমুক্ত এবং স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বৃস্পতিবার সিলেটের একটি হোটেলে প্রাণবন্ত এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে এবং ইউএনডিপি ‘র সহযোগিতায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা অনেক পুরানো। কতকগুলো বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয়নি। ফলে এগুলো কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারছে না। অসামঞ্জস্যপূর্ণ এ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। জুলাই অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব আমাদের সামনে সংস্কারের বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারের আওতায় অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কাজ করার কোনো কার্যকর পদ্ধতি তৈরি করা যায়নি। আইয়ুব খানের আমলে ইউনিয়ন কাউন্সিল ছিল। স্বাধীনতার পর সেটি ইউনিয়ন পরিষদ হয়েছে। এর কিছুদিন পর উপজেলা পরিষদ হলো। এরপর এল জেলা পরিষদ। সিটি করপোরেশন তুলনামূলকভাবে নতুন প্রতিষ্ঠান। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিচ্ছিন্ন অনেকগুলো আইনও হয়েছে। কিন্তু কোনো কেন্দ্রীয় পদ্ধতি তৈরি হয়নি।
এজন্য আমাদের একটি পদ্ধতি উন্নয়ন করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে একেকটি আইনে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ পরিচালিত হয়। এতে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। আমাদের অনেকগুলো আইন আছে। আবার এগুলো বিভিন্ন সময়ে কাটছাঁট হয়েছে। যে কারণে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা কঠিন।
মতবিনিময় সভায় জনপ্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও এনজিও প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। ছবি : সংগৃহীত |
দেশের সরকার সংসদীয় পদ্ধতির কিন্তু স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি শাসিত উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন একেকটি একেকভাবে কাজ করছে। প্রচলিত কাঠামোয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক ব্যক্তির কর্তৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে কাউন্সিল অধিবেশনে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, আবার এ অধিবেশনও ঠিকমত হয় না। । প্রণিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় কাউন্সিল সত্যিকার অর্থে কার্যকর হচ্ছে না।
ড. তোফায়েল জানান, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ২৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এত টাকা খরচ হয়েছে ঠিক, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে কোন নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচনের সংখ্যা কমিয়ে আনা দরকার। অসংখ্য নির্বাচন আয়োজন ছাড়াও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়। আমরা সে মডেল অনুসরণ করব। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন একসাথে করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে তিনি জানান।
সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ইভিএম আর ফিরে আসবেনা। এটা ইতিমধ্যে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনগুলোতে ‘না’ ভোটের বিধান আসছে। ব্যালটে ‘না’ থাকবে। ‘না’-ও একটি ‘প্রার্থী’ হয়ে যাচ্ছে।
ড. তোফায়েল বলেন, এত ত্যাগের বিনিময়ে একটি সুযোগ সামনে এসেছে। গণতন্ত্র চাইলে সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। একটি ফলপ্রসু পরিবর্তনে শিক্ষিত সৎ লোকদের এগিয়ে আসতে হবে।মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। এতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, ড. মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান, অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার দপ্তরের পরিচালক ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত ডিআইজি সিএসবি মোহাম্মদ এহ্সান শাহ্, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে মতবিনিময়ে অংশ নেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সিসিক কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারমান হাফিজ নজমুল ইসলাম প্রমুখ।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীবৃন্দ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য সেবাসমূহ জনবান্ধব, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না ব্যবহার, নারী কোটা ব্যবস্থাকে কার্যকর, প্রয়োজনে সাংগঠনিক কাঠামো পুননির্ধারণ, জবাদিহিমূলক পরিবেশ তৈরি, শিক্ষিত মানুষদের স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দূর, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মতো বিভিন্ন সুপারিশ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী স্তানীয় সরকারকে রাজনীতির বাইরে নিয়ে যেতে হবে বলে গুরুত্বারোপ করেন। কারণ রাজনীতিকরণ একটি মনস্তাত্বিক দুরত্ব তৈরি করেছে।
মতবিনিময় সভায় জনপ্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও এনজিও প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।