বিজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিনিধি : সিলেটের বিয়ানীবাজারের দুবাগ স্কুল এন্ড কলেজের মো. জাবির আহমদ (২০) নামের এক শিক্ষার্থী গত সাতদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর বিকাল থেকে ওই কলেজ ছাত্র নিখোঁজ হন। তবে তার পরিবারের দাবি, জাবির অপহরণের শিকার হয়েছেন। আর শিক্ষার্থী নিখোঁজের ৭দিব পার হয়ে গেলেও পুলিশ বলছে, বিষয়টি এখনো তদন্ত করছে।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, 'নিখোঁজের বিষয়টির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরিবার দাবি করছে, ওই ছেলেটি অপহরণ হয়েছে। তবে আমরা ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকার লোকজন ও ছেলের সহপাঠীদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি আইনানুগভাবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।'
জানা গেছে, নিখোঁজ কলেজ শিক্ষার্থী মো. জাবির আহমদ উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামের মো. আজমান হোসেনের ছেলে। সে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় দুবাগ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বাবা-মাসহ স্বজনরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
নিখোঁজ জাবির আহমদের ভাই জামিল আহমদ জানান, ‘গত ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটের সময় আমার সঙ্গে জাবিরের ফোনে যখন কথা হয়। ফোনে আমি তাকে বাড়ি আসতে বলি। কিন্তু পরে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
এদিকে, জাবির নিখোঁজের ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর পরিবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বলে জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী।
নিখোঁজ জাবিরের বাবা মো. আজমান আলীর পৈত্রিকা বাড়ি তিলপাড়া ইউনিয়নের মাটিজুরা গ্রামে। ২০০১ সাল থেকে দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামে বসতি গড়ে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়েই তার সংসার।
মো. আজমান আলী বলেন, 'গত ১১ অক্টোবর বিকালে প্রতিদিনের ন্যায় সে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হয়। তিনি বলেন, ছেলের সন্ধান পেতে অনেক খোঁজাখুজি করেছি। কিন্তু গত ১২ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। তাই থানায় জিডি করেছি।'
'অপহরণ কেন দাবি করছেন' - এমন প্রশ্নের জবাবে নিখোঁজ জাবিরের ভাই মো. জামিল আহমদ জানান, 'মেওয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে আমরা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছি। কিন্তু এরপর থেকেই ওই জমি নিজের দাবি করে আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার করছে আমাদেরই প্রতিবেশী আব্দুল খালিক নামে জনৈক একজন সাংবাদিক। এমনকি মামলা থেকে বাঁচতে তার কাছে গিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই টাকাও কয়েক দফায় নেয়ার পরও সে আমাদেরকে রেহাই দিচ্ছে না। '
জাবিরের ভাই আরও জানান, 'শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে আমার ভাই জাবিরকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধরের চেষ্টা করেন সাংবাদিক আব্দুল খালিক। কিন্তু ওইদিন তার সহপাঠীরা তাকে ওই সাংবাদিকের হাত থেকে আমার ভাইকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, স্থানীয় এলাকায় আমাদের কারো সাথেই কোন শত্রুতা নেই। তাই সবকিছু মিলিয়ে ওই সাংবাদিককেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আর সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে আমাদের ধারণা আরও বেড়েছে। আমার ভাই নিখোঁজ নয়, ওই সাংবাদিকই তাকে অপরহণ করেছে আমাদের শায়েস্তা করা জন্য।'
জাবিরের সহপাঠী মুবিন আহমদ, 'এইচএসসি পরীক্ষা চলার দ্বিতীয় দিন আমরা কয়েকজন সহপাঠী জাবিরকে সাংবাদিক আব্দুল খালিকের হাত থেকে উদ্ধার করি। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় সকালের ঘটনার মতো লাঠি হাতে ওই সাংবাদিককে রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। পরে জাবিরকে একা যেতে না দিয়ে ফোন করে জাবিরের পরিবারকে ডেকে এনে তাদের হাতে তাকে তুলে দিই। সাংবাদিক আব্দুল খালিক ও জাবিরের পরিবারের মধ্যকার ঝামেলার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।'
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, জাবিরকে অপহরণ করা হয়েছে। একাধিক মোবাইল ফোন যোগে নিখোঁজের পরিবারকে অপহরণের কথা বলে নানাভাবে অর্থ দাবি করছে একটি চক্র।
এদিকে, অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিক আব্দুল খালিক জানান, 'আমি কেন তাদের ছেলেকে অপহরণ করবো? আমি এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত নই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। তবে এটি ঠিক যে, তাদের সাথে আমার জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা চলমান আছে, যা আদালতে বিচারাধীন।'
তিনি আরও জানান, 'মো. আজমান আলী গংসহ অন্যান্যদের সাথেও আমার জমি-জমা সংক্রান্ত একাধিক মামলা-মোকাদ্দমা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেগুলোর কারণেই আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ তুলে আমার মানহানি করছেন। তিনি জানান, আমিও চাই তাদের নিখোঁজ ছেলে উদ্ধার হোক এবং প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে আসুক।'
এছাড়াও ২০০৫ সালে মো. আজমান আলী কুয়েতে থাকাবস্থায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে মাদকদ্রব্যসহ প্রশাসনের লোকজন পাঠিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বলেও দাবি করেন সাংবাদিক আব্দুল খালিক।