বিজ্ঞাপন
পাহাড় কেটে গাড়িতে করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলার ধারাবহর গ্রামে অবস্থিত গোলাপগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের পাশ থেকে তুলা | ছবি : জি ভয়েস টোয়েন্টিফোর |
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাত হলেই ছোট বড় মাঝারি আকৃতির মাটি বহনকারী ট্রাকের সারি সারি লাইনের দেখা মিলে গোলাপগঞ্জের পাহাড়-টিলা বেষ্টিত গ্রামগুলোতে । উদ্দেশ্য একটাই পাহাড় কেটে কৃষি জমি বা খালি জায়গা ভরাট করা। এ দৃশ্য যেন এ উপজেলায় নতুন নয়। দিনের আলো নিভে যখন রাতের আলো নামে, তখন বিভিন্ন কৌশলে সক্রিয় হয়ে ওঠে পাহাড়খেকো চক্র।
সামাজিক কিংবা প্রশাসনিক চাপের কারণে নিয়মিত না পারলেও কিছুদিন পরপর বেপরোয়া অবস্থান নেয় এ চক্রটি।
স্থানীয়রা বাঁধা দিলেও প্রশাসন ম্যানেজ করে চলে রমরমা এ পাহাড় কাটার ব্যবসা।
বিগত দিনগুলোতে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে লাল মাটি দিয়ে জমিন ভরাট ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। গত ৫ আগস্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর প্রশাসনের নিরব ভূমিকার সুযোগ নিয়ে পাহাড়ের মাটিকাটা চক্র আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রাতের আধারে পাহাড় কেটে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা। উপজেলার ধারাবহর এলাকা থেকে সম্প্রতি তুলা | ছবি : জি ভয়েস টোয়েন্টিফোর |
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধারাবহর গ্রামে অবস্থিত গোলাপগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পাহাড় কাটা। যেগুলোতে প্রতি রাতেই স্থানীয় প্রভাবশালী অসাধু শ্রমিক নেতাদের সহযোগিতায় প্রতিরাতে পাহাড় কাটতে দেখা যায়।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করলেও কিছু দিন পরপর তা আবার চরম আকার ধারন করে।
ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি। ছবিটি সম্প্রতি উপজেলার রাঙ্গাডহর বাজার এলাকা থেকে তুলা | ছবি : জি ভয়েস টোয়েন্টিফোর |
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি, আধা-সরকারি, সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এটি অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফের একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ জরিমানা গুণতে হবে।
কয়েকদিন আগে ভরাট করা হয় উপজেলার ধারাবহর একমাইলের মসজিদের পাশের একটি খালি জায়গা | ছবি : জি ভয়েস টোয়েন্টিফোর |
অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ তে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটা অথবা মোচনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র অবশ্যই নিতে হবে। ২০০২ সালের ৯ মার্চ পরিবেশ অধিদফতর এই সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বলা হয়েছে পাহাড় কর্তন ও মোচনের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা -১৯৫২ এবং ১৯৯৬ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ধারাবহর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তিনি জানান - স্হানীয় প্রশাসন ও তহসিলদার সহ সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের একদল লোক প্রতিনিয়ত রাতের বেলা পাহাড় কাটে। এ নিয়ে এলাকার যারাই প্রতিবাদ করেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা হয়। এমনকি অতীতে যারা টিলা কাটার প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে টিলা কাটার অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের তহসিলদার এ টি এম মাসুদের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় জি ভয়েস টোয়েন্টিফোরের এ প্রতিবেদককের, তিনি শ্রমিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখে পাহাড় কাটার সম্পর্কটি অস্বীকার করে বলেন আমি তাদের কাউকে চিনি না। যেই এ কাজ করুক আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমরা প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রদান করছি।আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।
এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি অবগত আছি বিষয়টি সম্পর্কে এমনকি আজকেও অভিযোগ পেয়ে সরজমিনে গিয়ে তাদের পাইনি। তবে স্হানীয়রা সহযোগিতা করলে আমি রাতেও অভিযান করতে প্রস্তুত। প্রথমে চেষ্টা করবো মোবাইল কোর্ট করার যদি না পাই নিয়মিত মামলা করবো।