Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪
সর্বশেষ সংষ্করণ 2024-07-12T16:01:29Z
সিলেট

সিলেটে বন্যায় পর্যটন খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : বন্যা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ‘প্রকৃতিকন্যা’ সিলেটের পর্যটনশিল্পকে। চলতি মৌসুমে তিন দফা বন্যায় রীতিমতো ধস নেমেছে এই খাতে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে পর্যটন খাতের ক্ষতি। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যভরা সিলেট। চা বাগান, জলাবন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ঝরনা, দিগন্তবিস্তৃত নীল জলরাশি হাওরসহ বিভাগজুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। ঈদুল আজহায় পর্যটনের ভরা মৌসুমে সিলেটে বাগড়া দেয় দফায় দফায় বন্যা। ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হয় পর্যটনকেন্দ্র। এখনো পর্যটকশূন্য সিলেট।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে প্রথম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৮ জুনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। বন্যার দ্বিতীয় ধাক্কা আসে ১৬ জুন। সেদিন আবার পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা বন্যার কবলে পড়ে। পরে নগর এলাকাসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা যায়। গত ১৯ জুন অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ওই সব উপজেলায় বন্যা বিস্তৃত হয়।

এর মধ্যে ১৭ জুন থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় ফের বন্যা দেখা দেয়। পরে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় তা বিস্তৃত হয়। এরপর ২৫ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হতে শুরু করার মধ্যেই ১ জুলাই সোমবার থেকে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে আবার বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি নামছে। ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দফায় দফায় বন্যায় গৃহহীন হয়ে পড়েন অনেক মানুষ। সদর, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাড়া বাকি সব উপজেলায় এখনো ২১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার বন্যার্ত।

পর্যটনকেন্দ্রগুলোও রয়েছে পানিতে নিমজ্জিত। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হয়েছে কোটি টাকার।

সিলেট হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। বেশির ভাগ এখনো ফাঁকা। ঈদের দিন থেকে বন্যা শুরু হওয়ায় প্রশাসন পর্যটক কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর থেকে দফায় দফায় বন্যার কারণে সিলেটমুখি হননি পর্যটকরা।

সিলেট হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সুমাইয়াত নুরী জুয়েল বলেন, ঈদুল আজহার সময় তার হোটেলে কোনো গেস্ট আসেননি। হোটেলের রুম বুকিং ছিল একেবারে শূন্য। ঈদ মৌসুমে এ রকম অবস্থা আগে কখনো হয়নি। বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে, এর পরও দেখা মিলছে না পর্যটকের। এভাবে চলতে থাকলে হোটেল-মোটেল ব্যবসা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, পর্যটনের সঙ্গে কেবল হোটেল নয়, অনেক বিষয় জড়িত। এর সঙ্গে পরিবহন, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও নৌকার বিষয়টিও জড়িত। অর্থাৎ পর্যটকরা যেদিকে যাবেন, সেদিকে আর্থিক বিষয় সম্পৃক্ত। পর্যটক না আসায় সব খাতেই এর প্রভাব পড়েছে। এই কয় দিনে পর্যটন খাতে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

সিলেটের প্রধানতম পাথর কোয়ারি রয়েছে কোম্পানীগঞ্জে। সেখানে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়ে মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা সাদা পাথর নামক জায়গাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভিড় জমায়। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। সাদা পাথর ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে, তবে এখনো পর্যটকদের দেখা মিলছে না।

কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি আবিদুর রহমান জানান, দফায় দফায় বন্যায় পর্যটন শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পানি নামতে শুরু করেছে। পর্যটক আসা এখনো শুরু হয়নি। টানা এক মাস ধরে সাদাপাথর কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে সিলেট নগরীঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র এশিয়ার অন্যতম জলাবন রাতারগুল। ভরা মৌসুম হলেও এখনো পর্যটকের আনাগোনা বাড়েনি। শুধু রাতারগুলো নয়, বন্যার কারণে পুরো পর্যটন খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

সিলেট ট্যুরিজম ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবীর লিটন বলেন, বন্যায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর যাতায়াতের রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুততম সময়ে রাস্তাঘাট সংস্কার করে দেয়া প্রয়োজন। না হয় অনেক পর্যটনকেন্দ্র পর্যটক হারাবে।

পানি নামতে শুরু করেছে খবর পেয়ে এখন কেউ কেউ বেড়াতে আসছেন, তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখনো স্বরূপে ফেরেনি। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যার কারণে শিল্প-বাণিজ্যের সব খাত ক্ষতি হয়েছে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পানি পুরোপুরি নেমে যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন অবস্থান করছেন।

পর্যটনসমৃদ্ধ উপজেলাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো আবার মুখর হয়ে উঠবে।’

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ