বিজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক: গোলাপগঞ্জের বাদেপাশা ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চলাচলের রাস্তা হচ্ছে উত্তর আলমপুর-মাসুরা সড়ক। এই রাস্তা দীর্ঘ দিন থেকে একটি খালের ভাঙ্গনে প্রায় বিলীন পথে ছিল। এলাকাবাসী এই রাস্তাটি সংস্কার ও পাকাকরণে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও স্মারকলীপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসীই রাস্তাটির অস্তিত্ব রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
তারা এলাকার বিভিন্ন বিত্তবানদের আর্থিক সহায়তা নিয়ে মাঠি ভরাটের কাজ শুরু করেছেন। এই মাটি ভরাটের কাজে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম ২লক্ষ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলেও জানা যায়। তবে এই মাটি ভরাটে রাস্তার সাময়িক অস্তিত্ব রক্ষা হলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য এলাকাবাসী রাস্তাটি পাকাকরণে সরকারি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে গেলে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা হয়।এরমধ্যে কেওটকোনা গ্রামের মাস্টার লুৎফুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই রাস্তাটি সংস্কারে বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এলাকাবাসী এই রাস্তাটি সংস্কারে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। রাস্তাটি প্রায় বিলীনের পথেই ছিল। শেষ পর্যন্ত এলাকার কিছু মানুষের উদ্যোগে ও প্রবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এটা স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে এই স্থায়ীভাবে রাস্তার সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি বড় বরাদ্দের দাবি করছি। যাতে করে রাস্তাটি পাকাকরণ বা ইট সলিং করা হয়।
তিনি আরো বলেন, যারা এই রাস্তাটির মাটি ভরাটের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রবাসীরা কে কত টাকা দিয়েছেন তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করার আহবান জানিয়ে বলেন এতে করে আরো মানুষ এই রাস্তাটি কাজে এগিয়ে আসবে।
বাদেপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছালেহ আহমদ জানান, দীর্ঘদিন দিন থেকে ৪/৫ টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ এই রাস্তাটির জন্য ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিন দিনের প্রাণের দাবি হচ্ছে এই রাস্তাটি সংস্কার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫লক্ষ টাকার মাটির ভরাটের কাজ প্রবাসীদের সহযোগিতায় হয়েছে। প্রবাসীরা আরো সহযোগিতা করছেন। আমরা আশা করবো এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি মেরামতে নজর দিবেন। তারা রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করে তুলবেন।
উত্তর আলম গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন জানান, এই রাস্তাটি সংস্কারে দীর্ঘদিন থেকেই আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। রাস্তাটি মাটি ভরাটের পাশাপাশি আমি আশা করছি কর্তৃপক্ষ সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে পাকাকরণ করে দিবে। আপাতত চলাচলের উপযোগী করার জন্য ইট সলিং করে দেওয়ারও আহবান জানান তিনি।
সিএনজি চালক জসিম উদ্দিন জানান, এই রাস্তা দিয়ে ৬/৭ বছর পূর্বে সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে যাত্রী চলাচল করতো, আজ ওই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই এলাকায় কোন মানুষ অসুস্থ হলে সেই রোগীকে হাসপাতালে নিতে খুবই কষ্ট হয়। অনেক সময় রোগী রাস্তায় মারা যান। আমরা আশা করছি এলাকাবাসী যেহেতু মাটিভরাট করে রাস্তার কাজ এগিয়ে দিয়েছেন। সরকার এই রাস্তাটি সংস্কারে অবশ্যই উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
উত্তর আলম গ্রামের বিলাল আহমদ, কেওটকোনা গ্রামের কানো মিয়া সহ কয়েকজন
এলাকাবাসী জানান, এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাস্তাটির মাটিভরাটের কাজ হলেও বৃষ্টির সময় আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। এজন্য সরকারি ভাবে স্থায়ী কোন কাজের প্রয়োজন। যাতে করে রাস্তাটি দিয়ে মানুষ ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। বৃহত্তর এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার উত্তর আলমপুর হতে মাসুরা গ্রামের খুশীদের খেয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার করে জনসাধারণের নিরাপদ চলাচলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি জানান তারা।
জানা যায়, রাস্তাটি উত্তর আলমপুর থেকে ভাদেশ্বর ইউনিয়নের আওতাধীন মাসুরা গ্রামের খুশীদের খেয়াঘাট হয়ে ভাদেশ্বর মোকামবাজারের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। প্রায় ৩কিলোমিটার রাস্তাটি খালের ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে ছিল। উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের আওতাধীন উত্তর আলমপুর, কেওটকোনা, দক্ষিণ আলমপুর, কোনাগাঁও, কুলিয়া, বাদেপাশা, বৃহত্তর বাগলা, সুপাটেকসহ কয়েকটি গ্রামের একমাত্র রাস্তা এটি।
এছাড়াও ওই রাস্তাটি ভাদেশ্বর মডেল মাদ্রাসা, ভাদেশ্বর হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ভাদ্বেশর নাছির উদ্দীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভাদেশ্বর মহিলা কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন।