বিজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক: “ছোটবেলা থেকে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। অনেক ভালো লাগতো।আমার মা একসময় ঘণ্টার পর ঘন্টা সাইকেল চালাতেন।মায়ের এমন গল্পগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সময়টা (২০০৯-২০১৪) তখন আমি চকোবিতে পড়ি, তখন থেকেই আমার একমাত্র বাহন সাইকেল।”
কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের সাইক্লিস্ট মোহাম্মদ রাফফান।তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ছোঁয়ালিয়াপাড়া গ্রামে।
মোহাম্মদ রাফফান এর বাবা নাসির উদ্দিন একজন (অব:) প্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।দুই বোনের মধ্যে রাফফান সবার ছোট ।চকরিয়া সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্র মোহাম্মদ রাফফানের সব স্বপ্ন সাইক্লিং নিয়ে।
সাইক্লিং নিয়ে রাফফান বলেন, ছোটবেলা থেকে সাইকেল নিয়ে আমার পাগলামি শুরু।‘শুধু আমার উপজেলা নয়; পার্শ্ববর্তী উপজেলা পেকুয়া সহ অনেক জায়গায় ঘুরেছি, দেখেছি; দেখেছি তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন।আমার সাইকেলে ভ্রমণ করতে খুবই ভালো লাগে।’
রাফফানের বর্ণনায় ওঠে আসে তার সাইক্লিং জীবনের কথা।তিনি বলেন, তিনি সাইকেল নিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার চড়েছেন।জিপিএস ট্রাকিং অ্যাপ স্ট্রাভাতে রেকর্ড আছে এসব ট্যুরের। সাইকেলে ঘুরে বেড়ানোর তথ্য।
সাইকেলের এমন নেশায় পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু কাজ করেছেন রাফফান।তেমন একটি ঘটনা ২০২১সালের।(বিজয় রাইড ২০২১)কৈয়ারবিল থেকে বান্দরবানের লামা এবং চকরিয়ার বমুবিলছড়ি হয়ে আবার বাড়ি পর্যন্ত একটি সাইকেল ট্যুর ছিল যেখানে একদিনে প্রায় ৮০-৯০কিমি সাইকেল রাইড করে সমতল এবং পাহাড়ি এলাকায়। এটা তাদের টিমের জন্য কঠিন একটা ট্যুর ছিল।সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অনেক দেরি করে বাড়িতে ফেরার ঘটনাও ঘটেছে। বাবা মায়ের বকুনি শোনেন, তবে সাইক্লিস্ট মোহাম্মদ রাফফানের এ নিয়ে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সাইক্লিংয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় তিনি ঘুরেছেন। তার সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি একটি বার্তা ছড়িয়ে (মাদক থেকে দূরে থাকুন, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকুন ) পৌঁছে দেন। এভাবে সাইক্লিং করতে গিয়ে গড়ে তুলেন সাইক্লিং ক্লাব ইআরবিসিসি(ERBCC) এরপর এই ক্লাবের হয়ে তিনি সব কাজ পরিচালনা করছেন।
সাইক্লিস্ট রাফফান জানান, এক দিনে তিনি টিম ইআরবিসিসির সঙ্গে বিরতিহীন ৮০-৯০ কিলোমিটার সাইকেল ভ্রমণ করেছেন।কৈয়ারবিল থেকে তার যাত্রা শুরু হয়।চকরিয়া উপজেলা যান শুরুতে। পরে বান্দরবানের লামা গিয়ে সেখান থেকে বমুবিলছড়ি যান তারপর আবার চকরিয়ার কৈয়ারবিলে ফিরে আসেন।
চলতি বছর বিভিন্ন ইউনিয়নে সাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করেছেন তরুণ সাইক্লিস্ট মোহাম্মদ রাফফান।সেখানে সাইকেল ভ্রমণের সময় সাধারণ মানুষের মন উজাড় করা ভালোবাসা পেয়েছেন।
সাইক্লিং নিয়ে রাফফান তার স্বপ্নের কথা বলেন।অনেক বছর ধরে দুই চাকায় পা রাখা এ ব্যক্তি বিশ্বভ্রমণের জন্য মরিয়া।
ইআরবিসিসি ক্লাবের সদস্য খাইরুল বশর সায়েম বলেন, ‘‘সাইক্লিং কালচার নিয়ে রাফফানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সক্ষমতাও আমাকে মুগ্ধ করেছে। সাইক্লিং নিয়ে ‘ইআরবিসিসি’ নামে তিনি একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তরুণ প্রজন্মকে এ পরিবেশবান্ধব বাহন চালনায় উৎসাহী করছেন এবং ইতোমধ্যে সাইক্লিং নিয়ে বেশ কয়েকটি বড় ইভেন্ট আয়োজন করেছেন।
“তাতে গ্রাম-শহরের সাইকেলচালকরা এসে যোগ দিয়েছেন। মানুষের স্বপ্ন, পরিকল্পনা এবং সাহস যে সবকিছুকে সম্ভব করতে পারে,রাফফান আবার তার প্রমাণ দিয়েছেন।’’
রাফফান সাইকেল নিয়ে চকরিয়া এবং পেকুয়া উপজেলা, বান্দরবানের লামা সহ বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি দিয়েছেন সফলতার সঙ্গে।
নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন রাফফান।এর মধ্যে বৃক্ষরোপণ উল্লেখযোগ্য।সাইক্লিস্ট মোহাম্মদ রাফফান ও তার সাইকেল বহন করেছে সবুজ-বসবাসযোগ্য সম্ভাবনার পৃথিবীর শান্তিময় বার্তা।
“সাইকেল দিয়ে আপনার জীবন উপভোগ করুন”