বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাম্প। যেগুলোতে গ্যাস রয়েছে, সেখানে দীর্ঘ লাইন। এতে করে নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। যার কারণে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিক-চালক ও যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট নগরের পাঠানটুলার আহমদ গ্যাস ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের জন্য দীর্ঘ লাইন। মদিনা মার্কেট থেকে শুরু করে গ্যাস পাম্প পর্যন্ত সিএনজি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের দীর্ঘ লাইন। এতে করে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের এই রাস্তায় শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। যাত্রীরা রাস্তায় দাঁড়িয়েও পাচ্ছেন না গাড়ি। আর তীব্র যানজটের কারণে গাড়িও রাস্তা পেরুতে পারছে না। বর্তমানে এ রকম লম্বা লাইন সিলেটের প্রায় প্রত্যেকটি গ্যাস পাম্পে।
জানা যায়, গ্যাস পাম্পগুলোর জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ (লিমিট) দেওয়া হয়। সেই বরাদ্দ শেষ হয়ে গেলে সেই পাম্প পরবর্তী মাস না আসা পর্যন্ত আর কোনো গ্যাস পায় না। যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ওই সব পাম্প। যার কারণে তখন যেসব পাম্প খোলা থাকে, সেসব পাম্পে গ্যাসের জন্য গাড়ির প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। শত শত গাড়ির লাইন অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। গাড়ি চালকের সঙ্গে যাত্রীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দিনের অনেকটা সময় গ্যাস নিতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান চালকেরা। এতে করে গাড়ি চালানোই দায় হয়ে পড়ছে তাদের। পরিবার নিয়ে আছেন সমস্যায়। ভোর থেকেই তাদের লাইনে দাঁড়াতে হয় গ্যাস নেওয়ার জন্য। এদিকে সিলেটে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি গ্যাসের লিমিট বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সিলেটের টুকের বাজার ইউনিয়নের নালিয়ার সিএনজি চালক আহমদ আলী জানান, ইদানীং গ্যাস পাওয়া সোনার হরিণের মতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস পাওয়া যায় না। এই শীতের মাঝেও ভোর থেকেই গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভোরে গিয়েও দেখা যায় লম্বা লাইন। সবাই পেটের দায়ে ঘুম-নিদ্রা হারাম করে ভোরে চলে আসে। আমাদের এই দুঃখ তো যাত্রীরা বোঝে না। ভাড়া বাড়িয়ে নিলেই সমস্যা। এদিকে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। দিনের অর্ধেক সময় চলে যায়। যার কারণে আগের মতো আর তেমন রুজি হয় না।
মনোয়ার সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক সাজওয়ান আহমদ বলেন, ‘২০০৭ সালে প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ (লিমিট) দেওয়া হতো, এখনও তা দেওয়া হচ্ছে। তখনকার চেয়ে এখন সিলেটে ৩-৪ গুণ গাড়ি বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি গ্যাসের বরাদ্দ। যার কারণে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত গ্যাস সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গত ৫ দিন বন্ধ থাকার পরে আজ আমার গ্যাস পাম্প খুলছে। যে পরিমাণ গ্যাসের লিমিট দেওয়া হয়, তা ২০ তারিখের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এ রকম অবস্থা সিলেটের বেশির ভাগ পাম্পের।’
সিলেট বিভাগীয় সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের প্রায় বেশির ভাগ পাম্পের মাসের ১৫ তারিখের পরেই গ্যাস সরবরাহ কমতে শুরু করে। আর ১৮-২০ তারিখের মধ্যে অনেক গ্যাস পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। যেসব পাম্পে গ্যাস থাকে সেগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
আমিরুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, গ্যাস বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য অনেক আন্দোলন ও চিঠি চালাচালি করা হলেও এখনো কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। জ্বালানি উপদেষ্টা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জালালাবাদ গ্যাসের নিকট চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা গত বছর ৫০০ টাকা করে সিএনজি পাম্পগুলো থেকে চাহিদাপত্র নিয়েছিল। কিন্তু পরে কিছুই হয়নি।
দেশের অন্যান্য জায়গায় এমন সংকট নেই জানিয়ে আমিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ গ্যাস সিলেট থেকে গ্রিডে সংযোজন হচ্ছে। কিন্তু সিলেটে গ্যাস সংকটে সিএনজি পাম্পগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। দেশের অন্যান্য জায়গায় এমন সংকট নেই, কিন্তু সিলেটেই এই সংকট। ইতিমধ্যে সিলেটের প্রায় ৬০ ভাগ গ্যাস পাম্প বন্ধ রয়েছে।
তিনি পাম্পগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
জালালাবাদ গ্যাস টি অ্যান্ড ডি সিস্টেম লিমিটেড সিলেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুর রহমান বলেন, এই সমস্যা আর থাকবে না। কালকেই (বৃহস্পতিবার) শেষ হয়ে যাবে। তাদেরকে যেই পরিমাণ গ্যাস দেওয়া হয়েছিল, সেটা তারা অলরেডি শেষ করে ফেলছে, এ জন্য এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের দেওয়া চাহিদাপত্র এবং গ্যাসের লিমিট বাড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি অফিসে এসে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
সৌজন্যে : আজকের পত্রিকা