বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট অঞ্চলের দুটি স্থলবন্দর ও ছয়টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।
পাথর ও চুনাপাথর আমদানিতে শুল্ক (অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু) বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ৮ জানুয়ারি থেকে আমদানিকারকরা এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
আমদানিকারকদের অভিযোগ, গত চার মাসের মধ্যে দুইবার পাথর আমদানিতে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়িয়েছে কাস্টমস। এতে আমদানিকারদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। বর্ধিত রেট প্রত্যাহার করার আগ পর্যন্ত আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। যা গত ৮ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
এদিকে, আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এতে স্থল বন্দর ও শুল্ক স্টেশনের লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। আমদানি চালুর দাবিতে শনিবার ভোলাগঞ্জে বিক্ষোভও করেছেন শ্রমিকরা।
জানা যায়, সিলেট সীমান্তের কাছে ভারতের পাথর-চুনাপাথরের খনি সমৃদ্ধ মেঘালয় রাজ্য। এর ফলে অন্য স্থানের তুলনায় কম পরিবহন খরচ ও কিছুটা কম দামে মেঘালয় থেকে পাথর আমদানি করেন সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। এ কারণে সিলেটের গোয়াইনঘাটের তামাবিল, বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর ছাড়াও কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাগলি, বড়ছড়া ও চারাগাঁও এবং ছাতকের ইছামতী ও চেলা স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর ও পাথর আমদানি হয়ে থাকে।
শুল্ক বিভাগের তথ্যমতে, সিলেট অঞ্চলের স্থল বন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলো দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার টন পাথর ও চুনাপাথর আমদানি হয়। তবে গত ৮ জানুয়ারি থেকে এই সবগুলো সীমান্ত দিয়ে আমদানি বন্ধ রয়েছে।
আমদানিকারকরা জানান, প্রতি টন পাথর ও চুনাপাথর সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ডলারে তারা আমদানি করেন। তবে এই পাথরের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নিম্নমানের থাকায় তা ফেলে দিতে হয়। তবুও গত বছরের জুলাই পর্যন্ত এনবিআর আমদানি মূল্য নির্ধারণ করেছিল পাথর ১১ ডলার ও চুনাপাথর সাড়ে ১১ ডলার।
এরই মধ্যে গত বছরের আগাস্টে আবারও অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ১ ডলার বাড়িয়ে পাথর ১২ ডলার ও চুনাপাথর সাড়ে ১২ ডলার করে চিঠি দেয় শুল্ক বিভাগ। সে সময়ও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
৪ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ৭৫ সেন্ট বৃদ্ধি নির্ধারণ করে নতুন অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু দাঁড়ায় পাথরের ক্ষেত্রে ১১.৭৫ ডলার আর চুনাপাথরের ক্ষেত্রে ১২.২৫ ডলার।
এরপর ৪ জানুয়ারি আবারও অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ১.২৫ ডলার বৃদ্ধি করে পাথরের ক্ষেত্রে ১৩ ডলার আর চুনাপাথরের ক্ষেত্রে ১৩.৫০ ডলার নির্ধারণ করে চিঠি দেয় কাস্টমস। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৮ জানুয়ারি থেকে সিলেট বিভাগের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
তামাবিল চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী জানান, বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। দেশেও পাথর ও চুনাপাথরের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই সিলেটের সবকটি বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনপাথর পাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার না হলে আমদানি শুরু হবে না।
এ বিষয়ে সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, দেশের অন্য এলাকার তুলনায় সিলেটে অনেক কম অ্যাসেসম্যান্ট ভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা আইন মেনেই করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ওপরে একবারে চাপিয়ে না দিয়ে দুই ধাপে গত আগস্টে ০.৭৫ ডলার আর এই জানুয়ারিতে ১.২৫ ডলার বাড়ানো হয়েছে।