বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: নুরুল ইসলাম নাহিদ তখন প্রচারণায় ব্যস্ত। ঢাকায় যেতে হঠাৎ কেন্দ্রের তলব। গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দ থেকে সোজা ধরলেন এয়ারপোর্টের পথ। দুপুর ১২টার ফ্লাইটে ঢাকায় গেলেন।
গোলাপগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- ৪০ মিনিটের বৈঠক হলো ঢাকায়। বৈঠক শেষে বিকালে তিনি যখন বের হলেন তখন সিলেটে থাকা নেতাদের ফোনে জানিয়ে দিলেন- ‘আমি নির্বাচন করবো।’ তার এই নির্দেশের পর উৎকণ্ঠায় থাকা নেতারা ফের মাঠে নেমে পড়লেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। প্রবীণ রাজনীতিক। সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাকে ঘিরে এবার ভোটের মাঠে নানা জল্পনা।
ভোটের প্রচারণায় নানা খবর বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তার আসনে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ার্যামান শমসের মবিন চৌধুরী। আলোচনা চলছে তাকে নিয়েও।
তৃণমূল বিএনপি’র নেতারা মনে করছেন- নাহিদই বাধা শমসের মবিনের। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নুরুল ইসলাম নাহিদের ঘনিষ্ঠজন সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন নৌকার প্রার্থী নাহিদের গতকালের ঢাকা সফর সম্পর্কে জানিয়েছেন; নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রার্থী আছেন, থাকবেন। জরুরি প্রয়োজনে তিনি গতকাল দুপুরের ফ্লাইটে ঢাকায় গিয়েছিলেন।
ভিআইপি ব্যক্তি হওয়ায় তিনি তার নিজের কাজে জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যান। কাজ সেরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট ফিরেছেন। রাতে তিনি গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়েছেন। তার এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানও যোগ দেন। তৃণমূলের প্রার্থী শমসের মবিন সম্পর্কে তিনি বলেন- নিজ এলাকা গোলাপগঞ্জে শমসের মবিন চৌধুরী ৫ থেকে ৭ হাজার ভোট পেতে পারেন। এর বেশি না। সাধারণ মানুষ প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গেই রয়েছেন। নৌকা ছাড়া এ আসনের মানুষ অন্য কিছু চায় না।
এদিকে- তৃণমূল বিএনপি’র শিবিরে নির্বাচনী প্রচারণায় গতি বাড়ানো হয়েছে। ভোটের মাঠে তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে বেশিসংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা মাইকিংয়ের জন্য প্রচারণায় নামে। এছাড়া নতুন করে এলাকায় পোস্টারিং করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাঠে ভোটারের নজর কাড়তে প্রার্থী নিজেও প্রতিদিন একাধিক স্থানে উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে দলের নেতারা জানিয়েছেন- মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ১২ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় গিয়েছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। সিলেট ফিরেছেন বুধবার দুপুরে। এলাকায় ফিরেই তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর ওই বৈঠক থেকে নির্বাচনী প্রচারে গতি আনার ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা মতো প্রচারণা বাড়াতে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে সব জায়গায় মাইকিং, পোস্টারিং চলছে।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থী নিজেও এলাকায় নির্বাচনী সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকছেন। তৃণমূল বিএনপি’র গোলাপগঞ্জের আহ্বায়ক সানাউর রহমান জানিয়েছেন, শমসের মবিন চৌধুরী হঠাৎ করে ১২ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় গিয়েছিলেন। এ সফর তার ব্যক্তিগত সফর ছিল বলে আমরা জেনেছি। ফিরে এসে তিনি আবার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
এদিকে, এবারের সিলেটের ৬টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সিলেট-৬ আসনের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন, সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন।
এই চারজনই হচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থী। ভোট কাড়তে প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ফলে আসনটিতে খোদ তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী প্রার্থী হওয়ায় যেকোনো নাটকীয়তা ঘটতে পারে বলে ভোটারসহ রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। এ কারণে হঠাৎ করে নাহিদের ঢাকা সফর নিয়ে নানা জল্পনা ডালপালা মেলে। নাহিদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ডাকে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন।
গতকাল বিকাল ৩টার দিকে কেন্দ্রের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি জানা যায়নি। তবে- বৈঠক শেষে তিনি নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং নির্বাচন করবেন বলেও ঘোষণা দেন। অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ঢাকা সফরে কার সঙ্গে কোথায় আলোচনা করেছেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দ
লের নেতারা শমসের মবিনের ঢাকা সফরকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে জানিয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন; হঠাৎ ঢাকা সফরে গিয়ে ‘চাঙ্গা’ হয়ে এলাকায় ফিরেছেন শমসের মবিন চৌধুরী। নির্বাচনে জয় ঘরে তুলতে মাঠে দুর্বার গতিতে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি। অথচ ঢাকা সফরের আগে শমসের মবিন চৌধুরীকে এতটা আত্মবিশ্বাসী দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- শেষ মূহূর্তে নৌকার প্রার্থী নিয়ে এ আসনে কোনো নাটকীয় ঘটনা ঘটলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার হোসেন। দলের তৃণমূলে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রয়োজনে সরওয়ারকে নিয়ে ভাবতে দলের নেতাকর্মীদের অসুবিধা হবে না বলে জানান তারা।
• নিউজ : মানবজমিন