বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে ৮ ধরনের তথ্য ভোটারদের মাঝে প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর কিছু তথ্যের সপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। হলফনামার তথ্য ভোটারদের মাঝে প্রচার করতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ জনাকীর্ণ স্থানে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ নির্দেশনা সম্পর্কিত পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (২৭ নভেম্বর) ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমানের সই করা এ পরিপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পরিপত্রে মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে হলফনামা যথাযথভাবে দাখিল করা হয়েছে কিনা এবং ওই তথ্যগুলো যথাযথ কিনা- রিটার্নিং অফিসারকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
হলফনামার মাধ্যমে যে ৮ ধরনের তথ্য প্রদান করতে হবে সেগুলো হলো :
১. হলফনামায় প্রার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটসহ উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে ফরমের সংশ্লিষ্ট ঘর খালি রাখা যাবে না। কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে নিরক্ষর, স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করতে হবে। তবে সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ প্রার্থীর কাছে না থাকলে, সেটি উল্লেখ করে তার অব্যবহিত পূর্বের অর্জিত সনদ যুক্ত করতে হবে।
২. প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনও ফৌজদারি মামলা আছে কিনা, তার সঠিক তথ্য দিতে হবে।
৩. অতীতে প্রার্থীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনও ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কিনা, থাকলে তার রায় কী ছিল? সেই তথ্য যুক্ত করতে হবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে বা খালাস পেয়েছেন, অথবা নিষ্পত্তি হয়েছে— এমন পুরনো মামলার বিস্তারিত তথ্য না দিতে পারলে মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হবে না। তবে দণ্ডিত হয়ে থাকলে এবং সহজলভ্য তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ না করার প্রমাণ মিললে মনোনয়ন ফরম গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪.পেশার বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে।
৫.আয়ের উৎস বা উৎসগুলো, যেমন- আয়কর রিটার্ন এবং মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে দেওয়া তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সমীচীন।
৬. প্রার্থীর নিজের ও অন্য নির্ভরশীলদের পরিসম্পদ ও দায়-এর বিবরণী দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য যে, প্রার্থীর টিআইএন নম্বর, সম্পদ ও দায় এবং বছরের আয় ও ব্যয় এবং সম্পদ বিবরণী সংবলিত সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ সংক্রান্ত কাগজপত্র ছাড়া মনোনয়ন ফরম গ্রহণযোগ্য হবে না। আয়কর রিটার্নের কপি গেজেটেড কর্মকর্তা/আয়কর আইনজীবীর মাধ্যমে প্রত্যয়ন করলেও গ্রহণযোগ্য হবে।
৭. এর আগে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন কিনা এবং থাকলে ভোটারদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা অর্জন সম্ভব হয়েছিল, সেই তথ্যাদি যুক্ত করতে হবে। কোনও প্রতিশ্রুতি না থাকলে ‘প্রতিশ্রুতি নেই’ অথবা ‘অর্জন নেই’ ইত্যাদি লেখা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।
৮. কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থী একক বা যৌথভাবে বা তার ওপর নির্ভরশীল সদস্যের নেওয়া ঋণের পরিমাণ, অথবা কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্যও সঠিকভাবে দিতে হবে।
এছাড়া সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী সম্পদ ও দায় এবং বার্ষিক আয় ও ব্যয় বিবরণী দাখিল করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রার্থীর টিআইএন নম্বরসহ সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন এবং কর পরিশোধের প্রমাণপত্রের কপি অবশ্যই দাখিল করতে হবে। নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর মনোনয়ন ফরমের নির্ধারিত স্থানে লিপিবদ্ধ করতে হবে। মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে প্রদত্ত হলফনামার নমুনা অনুসারে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে, অথবা সমপরিমাণ টাকার কোর্ট ফি সংযোজন করে নোটারি পাবলিক বা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হলফনামা সম্পাদন করে সংযুক্ত করতে হবে। দাখিলকৃত হলফনামার তথ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। যদি কোনও প্রার্থী হলফনামা দাখিল না করেন, বা অসত্য তথ্য প্রদান করেন, বা তথ্য গোপন করেন, বা যথাযথ প্রমাণাদি দাখিল না করেন, তাহলে তার মনোনয়ন ফরম বাতিল করা যাবে।
হলফনামা ও অন্যান্য তথ্যাদি মনোনয়ন ফরম জমাদানের দিন থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং এ তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইটে সবার অবগতির জন্য প্রকাশ করা হবে। তথ্যাদি লিফলেট আকারে ভোটারদের মাঝে প্রচার করতে হবে এবং নির্বাচন এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাট-বাজারে বা অন্য জনাকীর্ণ স্থানে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২ এর দফা (৩খ) অনুসারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সাথে হলফনামার মাধ্যমে ৮টি তথ্য দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ৮টি তথ্যের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণও দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।