বিজ্ঞাপন
খেলাধুলা ডেস্ক: খেলোয়াড়দের জীবন কত দ্রুত পাল্টে যায়! আজ পারিশ্রমিক ১ লাখ তো কাল ১০ লাখ। নিজের জীবনকে এভাবে দেখতে পারেন সিলেট থেকে উঠে আসা ২৭ বছর বয়সী ফুটবলার ইকবাল হোসেন।
ইকবাল হোসেনের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিন সুনামপুর গ্রামে। ইকবাল হোসেন ঢাকাদক্ষিণ ক্রীড়া চক্রের একজন খেলোয়াড়। এখান থেকেই তার ফুটবল খেলার যাত্রা শুরু।
গত শনিবার শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার ছিলেন ইকবাল। প্রিমিয়ারে যেটি ছিল তাঁর মাত্র দ্বিতীয় মৌসুম। প্রথমবার স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের জার্সিতে একাদশে খেলেন মাত্র দুটি ম্যাচ। বদলি খেলেছেন কয়েকটি ম্যাচে। এবার চট্টগ্রাম আবাহনীতে এসেও প্রথম পর্বে একাদশে খুব একটা সুযোগ পাননি। তবে দ্বিতীয় পর্বে খেলেছেন নিয়মিত।
বিদায়ী লিগে তাঁর মতো অনেক মিডফিল্ডারই খেলেছেন। কিন্তু ইকবাল খবরে আসছেন একলাফে নিজের পারিশ্রমিক ২৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে! চট্টগ্রাম আবাহনীতে বিদায়ী মৌসুমে পারিশ্রমিক পেয়েছেন ছয় লাখ টাকা। সেখান থেকে এবার শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে যোগ দিয়েছেন ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে।
বাংলাদেশের ফুটবলাররা সাধারণত চুক্তির অঙ্কটা বলেন না। ক্লাবও বিষয়টি গোপন রাখে। ইকবালের চুক্তির ব্যাপারে যোগাযোগ করলে শেখ রাসেলের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নিজের পারিশ্রমিকের ঊর্ধ্বলম্ফ নিয়ে ইকবাল হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘নতুন মৌসুমের জন্য শেখ রাসেলের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকায় চুক্তি করেছি। টোকেন মানিও নিয়েছি।’
‘টোকেন মানি’ তিন লাখ। বাকি টাকার ৪০ শতাংশ পাবেন একবারে, বাকিটা মাসিক বেতন ভিত্তিতে। তবে ৩০ লাখ নয়, ইকবালের আশা ছিল আরও বেশি পাবেন। টাকার অঙ্কও ভেবে রেখেছিলেন, ‘আমার তো আশা ছিল আরও বেশি পাব। অন্তত ৪০ লাখ টার্গেট রেখেছিলাম। শেখ রাসেলের কাছে সেটা চেয়েছিলাম, কিন্তু তা হয়নি। কারণ, এবার দলবদলের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সিনিয়র অনেক খেলোয়াড়ই টিম পাচ্ছেন না। দু–তিনটি টিম বাদ দিয়ে বাকি সবাই জুনিয়র টিম করতেছে। তবে আমি যা পেয়েছি তাতে খুশি আছি।’
ইকবালের ফুটবলজীবনে বিরাট এই বাঁকবদলের উপলক্ষ হয়ে এসেছে সদ্য শেষ হওয়া প্রিমিয়ার লিগ। যেখানে তিনি ৫টি গোল করেছেন। দেশি ফুটবলারদের পায়ে যখন গোল সোনার হরিণ, জাতীয় দলের ১ নম্বর স্ট্রাইকার সুমন রেজা যখন এবারের লিগে গোলের খাতা খুলতে পারেননি, সেখানে ইকবালের ৫টি গোলই অনেক বলতে হয়।
দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে এবার এলিটা কিংসলি (এক অর্থে তিনিও বিদেশি) করেছেন সর্বোচ্চ ৮ গোল। তারপর আবাহনীর নাবিব নেওয়াজের সঙ্গে যৌথভাবে ৫ গোল নিয়ে দুইয়ে ইকবাল। তাঁর এই উত্থানে চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার আরমান আজিজও কিছুটা বিস্মিত।
গত লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের ম্যাচে ইকবালকে দেখে তাঁরা পছন্দ করেন। আরমান সেটা নিয়ে বলছিলেন, ‘চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে স্বাধীনতার জার্সিতে মাঝমাঠ থেকে ইকবালের নেওয়া দুটি শট দেখে আমার ভালো লেগেছে। কর্নারে সে একটা ডাইভিং হেড করেছিল। সেটাও ভালো লাগে। ওর ভালো গুণ হেড। প্রথম টাচেও অনেক ভালো। তাই আমরা ওকে দলে নিই। আমাদের সঙ্গে ওর চুক্তি ছিল ছয় লাখ টাকা। সেখান থেকে শুনেছি এবার ৩০-৩৫ লাখ টাকায় শেখ রাসেলে গেছে।’
২০১৭-১৮ সালে পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর দিয়ে ইকবালের ঢাকায় খেলা শুরু। এরপর ফর্টিস এফসি, পুলিশ এফসির হয়ে দ্বিতীয় স্তরে কাটিয়ে নাম লেখান স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘে। এক মৌসুম পরপরই শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। তবে এখানেই না থেমে ইকবাল স্বপ্ন আঁকছেন চোখে, ‘আমার খুব ইচ্ছা জাতীয় দলে খেলব। আশা করি, এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’