বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ পর্যটন এলাকা জাফলং। ওখানে পাওয়া যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগী মিলছে লার্ভাও। প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে জাফলংয়ে রোগী ধরা পড়ে। একসঙ্গে ৩ রোগী পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ। শুরু হয় সার্চিং। প্রায় ৩ সপ্তাহের সার্চিংয়ে দেখা গেছে; জাফলংয়ে প্রচুর পর্যটক ঈদ মৌসুমে কিংবা তারও আগে এসেছে। তারা পলিথিন জাতীয় প্যাকেজে খাবার খেয়েছেন। আর এগুলো ফেলে দেয়ার পর পানি জমে সেগুলোতে ডেঙ্গুর লার্ভা হয়েছে।
এর বাইরে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর গোয়াইনঘাটের পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য জাফলংয়ের বাসিন্দারা ব্যবহারের জন্য পানি খালিপাত্রে কিংবা কলসিতে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। এসব পাত্র ও কলসিতেও মিলেছে লার্ভা। ট্রান্সমিশন হয়েছে ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের কাছ থেকেও।
তারা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে নিয়ে এসে জাফলংয়ে ছড়িয়েছে এবং এটি ক্রমশ গোয়াইনঘাটে ছড়িয়ে পড়ছে। সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মূলত জাফলং ও আশপাশ এলাকাতে ডেঙ্গু রোগী বেশি মিলছে। লার্ভাও পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সচেনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও মশারি পাঠানো হয়েছে। জেলার ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন সিলেটে। এরমধ্যে গত এক মাসে শনাক্ত হয়েছেন ৭০ জন। প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও ডেঙ্গু রোগী মিলছে। ফলে আমরা সতর্ক রয়েছি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সিলেটে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে উদ্যোগের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৩টি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে একটি পুরুষ, একটি মহিলা ও একটি শিশু ওয়ার্ড। বর্তমানে হাসপাতালে মোট ৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মূলত সিলেট জেলার জাফলং, সাহেববাজার, ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। ১লা মে থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে ২৪ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা দু’জনের শরীরে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও সিলেট নগরে এখনো কোনো ডেঙ্গু রোগী মিলেনি। বেসরকারি হাসপাতালেও কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেননি। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট নগরে এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান না মিললেও লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নগরের ২৬নং ওয়ার্ডের ৩ স্থানে এ লার্ভার অস্তিত্ব মিলেছে। সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। গতবার এই ওয়ার্ডের ১৭টি স্থানে তল্লাশি চালিয়ে ১৫টিতেই লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। এবার মিলেছে ৩ স্থানে।
সিলেট নগরে ইতিমধ্যে ৭৫টি স্থানে সার্চিং চালানো হয়েছে। ৫টি স্থানে লার্ভা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ১০ জনের টিম নগরে প্রতিদিনই লার্ভা সার্চিং চালাচ্ছে। যেখানে যেখানে লার্ভা পাওয়ার আশঙ্কা আছে সেসব স্থানেই তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে এখনো সিলেটে ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি। বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা সাঁড়াশি অভিযানে নামবো। জরিমানাও করবো।
এজন্য করা হবে মাইকিংও। সিলেটের সিভিল সার্জন ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, সিলেটে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেনি। তবে বৃষ্টির পর প্রখর রোদ শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু নিয়ে চিন্তিত। এজন্য আগেভাগেই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলছে সেসব এলাকাকে প্রথমে টার্গেট করা হচ্ছে। মশা এবং লার্ভা দুটোই ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ মতো চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
সূত্র : মানবজমিন