বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে বাদাম চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এবার কেবল সুনামগঞ্জ জেলায়ই ১ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। আর বাকী ৩ জেলায় চাষ করা হয়েছিল ৩৭৩ হেক্টর। চলতি মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে ৩ হাজার ৬৭৩ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কাজী মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে সিলেটের ডাককে বলেন, সিলেট অঞ্চলের মাটি বাদাম চাষের বেশ উপযোগী। এ কারণে এখানকার কৃষকরা বাদাম চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয়। খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মন্তব্য এ কৃষি কর্মকর্তার। তিনি বলেন, বাদাম চাষে কৃষকরা এগিয়ে এলে কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দিবে। সিলেটে অনেক পতিত জমি রয়েছে। পড়ে থাকা পতিত জমিতে ইচ্ছে করলেই বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি-শষ্য আবাদ করা যায়। এর ফলে উৎপাদন বাড়বে। বাড়বে আয়ও।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কৃষক আব্দুল আলীম জানিয়েছেন, বাদাম চাষে তুলনামূলক খরচ কম। জমিতে হাল চাষ করে বাদামের বিচি মাটির নীচে পুতে দিলেই হলো।এরপর সময় সময় যতœ নিতে হয়। দিতে হয় ইউরিয়া সারও। ধানের জমি থেকে বাদাম জমিতে সার ও কীটনাশক তুলনামূলক কম লাগে। গত বছরের চেয়ে এবার বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় তারা আনন্দিত বলে জানান এ কৃষক।
একই উপজেলার আরেক কৃষক নবীন হোসেন জানান, চলতি মৌসুমের বাদাম তোলা ইতোমধ্যে শেষ হয় গেছে। লোকজন ৮ ভাগা হিসেবে বাদাম তুলেছেন। যিনি ক্ষেত থেকে বাদাম তুলবেন তিনি নেবেন ১ ভাগ আর ক্ষেতের মালিক নেবেন ৭ ভাগ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার প্রতি কেদার জমিতে ২৩৪ কেজি বা পৌনে ৬ মন বাদাম উৎপাদন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে পৌনে ২ মেট্রিক টন বাদাম। সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়।ওই উপজেলায় স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ক্ষেত থেকে তোলা কাচা বাদাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়তদাররা বাদাম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।এই বাদামই খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২০০ টাকারও বেশি করে বিক্রি করা হয়।
প্রতি কেজি কাচা বাদাম ১০০ টাকা করে বিক্রয় হলে এক মণ বাদামের বর্তমান বাজার মূল্য ৪ হাজার টাকা। এ হিসেবে এক কেদার জমিতে ২৩ হাজার ৪০০ টাকার বাদাম উৎপাদন হয়েছে। এক কেদার জমিতে চাষাবাদে সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। বাকী ১৩ হাজার ৪০০ টাকা লাভ হয়েছে বলে বাদাম চাষী কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এ বছর সরকারিভাবে বাদামের বীজ ও সার দেয়া হয়েছিল। তবে, তা ছিল একেবারেই অপ্রতুল।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৭২৬ হেক্টর, সিলেট জেলায় ১৫৫ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ৬২ হেক্টর ও হবিগঞ্জ জেলায় ১৫৬ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। তবে, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বারি চিনাবাদাম-৮ জাতের ১৫ হেক্টর, বারি চিনাবাদাম-৯ জাতের ১০ হেক্টর ও বারি চিনাবাদাম-৪ জাতের ১০ হেক্টরসহ মোট ৩৫ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় বারি চিনাবাদাম-৫ জাতের ১৫ হেক্টর, বারি চিনাবাদাম-৬ জাতের ১৫ হেক্টর ও মাইজচর (ঢাকা) জাতের ১০ হেক্টরসহ মোট ৪০ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বারি চিনাবাদাম-৮ জাতের ৬১ হেক্টর ও মাইজচর (ঢাকা) জাতের ২০ হেক্টরসহ মোট ৮১ হেক্টর, জগন্নাথপুর উপজেলায় মাইজচর (ঢাকা) জাতের ১০ হেক্টর, জামালগঞ্জ উপজেলায় বারি চিনাবাদাম-৫ জাতের ২৩ হেক্টর ও বারি চিনাবাদাম-৬ জাতের ২৭ হেক্টরসহ মোট ৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। তাহিরপুর উপজেলায় ১ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল বারি চিনাবাদাম-৮ জাতের ২৩২ হেক্টর, বারি চিনাবাদাম-৯ জাতের ৫৬৩ হেক্টর, বারি চিনাবাদাম-৪ জাতের ১৩৫ হেক্টর, ত্রিধানা জাতের বাদাম ৯৫ হেক্টর, ঝিঙ্গা জাতের বাদাম ২১২ হেক্টর, মাইজচর (ঢাকা) জাতের ২৩৮ হেক্টর। এছাড়াও ধর্মপাশা উপজেলায় বারি চিনাবাদাম-৪ জাতের ১০ হেক্টর ছাতক উপজেলায় বাসন্তী জাতের ২০ হেক্টর ও দিরাই উপজেলায় ত্রিধানা জাতের বাদাম ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।