বিজ্ঞাপন
ফাহিম আহমদ : সিলেটের গোলাপগঞ্জে রাতের আঁধারে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টিলা কাটার মহোৎসব চলছে। খুব একটা অভিযান বা জরিমানা না হওয়ায় এসকল টিলাখেকোরা চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব।
বিগত কয়েকদিন সরেজমিনে উপজেলার ঘোষগাঁও, লক্ষীপাশা, লক্ষণাবন্দ, আমুড়া, ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। রাতের আঁধারে তারা বিভিন্ন টিলার মাটি কাটছেন। স্থানীয়রা বাধা দিলেও তারা মানছেন না। বিশেষ করে ট্যাকনিক্যাল স্কুল সংলগ্ন টিলায় টিলাখেকোরা চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসকল টিলা কাটার সাথে জড়িত রয়েছে এক অসাধু চক্র। যারা বিভিন্ন এলাকার টিলা কেটে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে ভাদেশ্বর ইউনিয়নের নালিউড়ি বটরতল পশ্চিমপাড়া গ্রামে রুকন মিয়ার বাড়ির টিলা কাটতে যাওয়ার সময় একটি ফেলোডার আটক করেন স্থানীয়রা। ফেলোডারটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের। মাটি কাটতে আসা ভাদেশ্বর ইউনিয়নের কামরুল ও সোহেল স্থানীয়দের তোপের মুখে ফেলোডার রেখেই পালিয়ে যান।
কামরুলের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘টিলা কাটার মাটির কাজে ব্যবহার করার জন্য ফেলোডার আনা হয়নি। ফিশারীর পাড় ভরাট করার জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত বাবুল নামে একজনের কাছ থেকে ভাড়া আনা হয়েছে।’
টিলা কাটার সাথে বেশ কয়েকজন জড়িত থাকার পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে শাহিন, সামাদ, এমদাদ, রাজু, জাফরান, কামরুল, সোহেলসহ আরও অনেকে বিভিন্ন এলাকায় টিলা কেটে থাকেন।
এছাড়া টিলার মাটি বহন কাজে ব্যবহৃত গাড়ির কারণে বিভিন্ন সড়কের অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। যেকারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
জানা যায়, বিগত দিনে ফুলবাড়ি এলাকার ঐতিহ্যবাহী ‘কিশোর টিলা’ কেটে অস্তিত্বহীন করে ফেলেছে এক অসাধু চক্র। এদের মধ্যে ছিলেন মতিন সহ বেশ কয়েকজন। এছাড়াও ঘোষগাঁও টিলাগাঁও গ্রামের ছখাতুল আম্বিয়া নামে আরও একজন তার বাড়ির টিলা কাটছেন।
আরও জানা যায়, ঘোষগাঁওয়ে একটি টিলা কাটতে গিয়ে টিলা থেকে পড়ে দুইজন শ্রমিকের পা ভেঙে যায়। এরমধ্যে আবুল মিয়া নামে একজন রমজানের ৩/৪ দিন আগে পা ভেঙে এখনো ঘরবন্দী রয়েছেন।
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে আবুল মিয়ার সাথে কথা বলি। তিনি বলেন, ‘টিলার মাটি কাটতে গিয়ে দু’পা ভেঙে আজ আমি ঘরবন্দী। যারা মাটি কাটতেছে তারা পুলিশকে টাকা দিয়ে চুরি করে মাটি কাটছে। মাটি কাটার সাথে জড়িত শাহিন, সামাদ, এমদাদ, রাজু।’
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান আহমেদ বলেন, ‘আমরা গত রমজানেও অভিযান পরিচালনা করেছি। তবে বর্তমানে আমাদের কাছে তথ্য নেই। যদি তথ্য পাই তাহলে অভিযান পরিচালনা করব।’
রাতের আঁধারে টিলা কাটা হয়, ‘সেই সময় তো সবাই ঘুমিয়ে থাকে তখন আমরা কোন তথ্য পাই না। তবে যেসকল টিলা কাটা হচ্ছে এসব টিলার মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অচিরেই আমরা টিলাগুলো শনাক্ত করে টিলার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করব।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। যখনই আমরা কোন তথ্য পাই তখনই অভিযান পরিচালনা করি। যখন অভিযানে গিয়ে তাদেরকে পাই না তখন অন্য ভাবে ব্যবস্থা নেই। এছাড়া আমরা পুলিশকেও বলে রেখেছি তারা দেখলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তারপরও কোন তথ্য থাকলে আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’