বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মো. আব্দুল মতিনকে (৭০) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মৃত্যুদণ্ডের রায় পাওয়ার পর থেকেই তিনি তার ভাগ্নের বাড়িতে আত্মগোপন ছিলেন।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আব্দুল মতিন, আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই এবং আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্তটি ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর শেষ হয়। তদন্তকালে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে একই বছর ১ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল ও আব্দুল মান্নান ওরফে মনাইকে গ্রেফতার করে। তারা বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছে।
অপরদিকে, গ্রেফতার আসামি আব্দুল মতিন তখন গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে গভীর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত ৫টি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০২২ সালের ১৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আব্দুল মতিন, আব্দুল আজিজ এবং আব্দুল মান্নানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে তিনি পলাতক জীবনযাপন শুরু করেন। তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানাধীন পাখিয়ালা গ্রামের নিজ বাড়ি ছেড়ে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় তার ভাগ্নের বাড়িতে আত্মগোপন করেন। সেখানে তিনি নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পলাতক জীবন শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত মতিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার ভাগ্নের বাড়িতে দীর্ঘ ৭ বছর পলাতক থাকাকালীন গতরাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ আনা হয়। আব্দুল মতিন এবং ওই মামলার অপর আসামি তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বারপুঞ্জিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা পালিয়ে বড়লেখায় এসে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। আব্দুল মতিন বড়লেখা থানা জামায়াত ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আব্দুল মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা মিলে মৌলভীবাজার এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন।
এছাড়া ১৯৭১ সালের ১৯ মে আব্দুল মতিনসহ এই মামলার অপর দুই আসামি আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান এবং তাদের সহযোগীরা মিলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানাধীন ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করে। তাদের ৩ দিন ধরে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানবিক নির্যাতন করার পরে জুড়ি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে যায়। সেই বধ্যভূমিতে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস এবং নগেন্দ্র কুমার দাসকে হত্যা করা হয়। অপহরণকৃত শ্রীনিবাস দাস নির্যাতিত অবস্থায় কোনোক্রমে পালিয়ে কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরে যায়।
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে মতিন, মামলার অপর আসামি আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানাধীন কেছরিগুল গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া খাতুন এবং আব্দুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওই রাজাকার ক্যাম্পে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পরবর্তীতে তারা টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্প হতে সাফিয়া খাতুনকে প্রথমে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প এবং কিছুদিন পর বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানেও সাফিয়া খাতুনকে বারবার গণধর্ষণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।