বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেট ক্যাডেট কলেজে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে সেখানে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালাতো। অগণিত লোককে সেখানে হত্যা করে ক্যাডেট কলেজের পেছনের টিলায় গণ কবর দিয়েছে। স্বাধীনতার পর এটি বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে বধ্যভূমিটি অনেকটা অগোচরে ও অযত্নে ছিল।
বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করে ‘শহীদ স্মৃতি উদ্যান’ নির্মাণ করা হয়। শনিবার (০৪ মার্চ) উদ্যানটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, শহীদ জায়া সৈয়দা সখিনা আবদালসহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বীর শহীদদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এই স্মৃতি উদ্যানে ৬৬ জন বীর শহীদের স্মৃতিফলক লাগানো হয়েছে। যাদেরকে এখানে হত্যা করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট সেনানিবাসের সহযোগিতায় দু'টি শহীদ পরিবারের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে এই উদ্যান । এই কাজের তদারক করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুস সালাম বীর প্রতীক।
তিনি বলেন, সিলেট সেনানিবাসের সহযোগিতায় শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদের ছেলে ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ ও আমার পরিবারের অর্থায়নে এবং সবার সহযোগিতায় শহীদ স্মৃতি উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্মৃতি উদ্যানে ৬৬ জন শহীদের নামফলক বসানো হয়েছে। পরবর্তীতে আরও শহীদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের নামফলকও স্থাপন করা হবে।
ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ জানান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারগুলোকে নিয়ে আমাদেরকে আরও বেশি করে ভাবতে হবে। একাত্তরে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। গণহত্যার বিষয়টি আমাদের আরও ব্যাপক প্রচার করতে হবে।
শনিবার শহীদ স্মৃতি উদ্যান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪০ জন বীর শহীদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। এসেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া লে. কর্নেল এএফ জিয়াউর রহমানের কন্যা শাহরীন রহমান ও তার স্বামী।
শাহরীন জানান, তাঁর বাবা সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৭১ সালে শাহরীনের বয়স ছিল পাঁচ বছর। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল তাঁর বাবাকে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর আর তিনি বাড়ি ফেরেন নি। বাবাকে যেখানে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়েছিল, ৫২ বছর পর সেই স্থানে এসে তিনি আবেগাপ্লুত। শহীদ স্মৃতি উদ্যান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শহীদ পরিবারের সকল সদস্যই এভাবে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। স্মৃতিফলকগুলোতে তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং আত্মার মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনা করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুস সালামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শহীদ সিরাজুল আবদালের স্ত্রী সৈয়দা সখিনা আবদাল। এতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বীর শহীদের কন্যা শাহরীন রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান প্রমুখ।