Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩
সর্বশেষ সংষ্করণ 2023-03-23T19:45:03Z
মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে ছোট ভাইয়ের কিডনিতে নতুন জীবন পেলেন বোন

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : ভাই-বোনের সম্পর্কই যেন অন্যরকম। যে সম্পর্কে যেমন রয়েছে শাসন, মান অভিমান। তেমনই আবার রয়েছে নিখাদ ভালবাসার বন্ধন। সময়ের তাগিদে সেই ভালবাসা বন্ধন যেন দিনদিন আরও গাঢ় হয়। আর এমনই এক ভাইয়ের আত্মত্যাগের কাহিনি শুনলেই চোখের কোনে জল জমে যায় অগোচরে।

বলছি, বোনের প্রতি ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এক ভাইয়ের কথা। যিনি নিজের জীবনের কথা না ভেবে তার একটি কিডনি দিয়ে বড় বোনের জীবন বাঁচিয়েছেন। এ ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রশংসায় ভাসছেন সেই ভাই। তিনি হলেন কুরআনে হাফেজ আব্দুর রাহিম (২৪) আর ভাগ্যবতী সেই বোনের নাম ফাহমিদা বুশরা ঝুমু (২৬)।

তারা মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাংকুল গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজনুর রহমানের সন্তান।

সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসকরা রাহিমের দেওয়া কিডনি ফাহমিদার দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। বর্তমানে ভাই-বোন দুইজনেই সুস্থ রয়েছেন।

এদিকে ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার সংগ্রহে বেশি অবদান রাখেন এলাকার লোকজন। তারা কয়েক মাসে ফাহমিদার চিকিৎসার তহবিল গঠন করে প্রায় ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে।

স্থানীয় ও ফাহমিদার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে ফাহমিদার সঙ্গে উপজেলার বর্ণি গ্রামের দুবাই প্রবাসী জাহেদ আহমদের বিয়ে হয়। এর একমাস পর জাহেদ পাড়ি দেন বিদেশে। এর মধ্যে হঠাৎ ফাহমিদার কিডনির সমস্যা ধরা পড়লে ফাহমিদার চলে আসেন বাবার বাড়ি।

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার ফাহিমদাকে জানান, তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর থেকে স্বামী জাহেদ ফাহমিদার কোনো খোঁজখবর নেননি। ডায়ালাইসিস করেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় যেন অন্ধকার নামে ফাহিমদা ও তার পরিবারে। কারণ পরিবারের পক্ষে এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা মোটেও সম্ভব ছিল না।

এ অবস্থায় পাশে দাঁড়ান ফাহিমদার আপন ছোট ভাই কুরআনে হাফেজ আব্দুর রাহিম। তিনি নিজের একটি কিডনি বোনকে দান করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফাহমিদার কিডনির সঙ্গে রাহিমের কিডনি মিলে যায়। কিন্তু, কিডনি পাওয়া গেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রতিস্থাপনের ব্যয়ভার। কারণ চিকিৎসার খরচের জন্য এত টাকা ব্যয় করা ফাহমিদার পরিবারের পক্ষ ছিল অসম্ভব।

ফাহমিদার পরিবার বিষয়টি আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজনকে জানান। এলাকার লোকজন ফাহমিদার পাশে দাঁড়ান। তারা তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে ‘ফাহিমদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিল’ গঠন করেন। এরপর শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। হাত বাড়ান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মানুষ। প্রায় চার মাসে তহবিলে ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়। সেই টাকা দিয়ে চলতি মাসের ৩ মার্চ ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসকরা রাহিমের দেওয়া কিডনি ফাহমিদার দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।

বোনকে কিডনি দেওয়ার ভাই আব্দুর রাহিম বলেন, ‘আমার বোন আমাকে খুব আদর স্নেহ করেন। তাই তাকে বাঁচাতে আমার কিডনি দিয়েছি। আমার দেওয়া কিডনি তার দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। হাসপাতালে আরও কিছুদিন থাকা লাগবে।’

ফাহিমদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের আহ্বায়ক সাহেদুল ইসলাম সুমন এবং সদস্য ফয়ছল রানা জানান, ফাহমিদার চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে দেশ-বিদেশের সবার সহযোগিতায় ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই টাকা থেকে ফাহমিদার চিকিৎসার পেছনে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

তারা বলেন, ‘ফাহমিদাকে বাঁচাতে তার ভাই হাফেজ আব্দুর রাহিম নিজের একটি কিডনি দিয়ে ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ