বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণে জরুরি সহায়তা শীর্ষক এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পের যে প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে; তাতে কয়েকটি খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ১০৫টি এ-টাইপ পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি টয়লেটে ব্যয় হবে ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া অন্যান্য প্রকল্পে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ব্যয় হচ্ছে ৮ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকার মধ্যে।
২০২১ সাল থেকে চলমান গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্পে ২ হাজার ৪৬০টি এ-টাইপ পাবলিক টয়লেট স্থাপনে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এখানে প্রতি টয়লেটে ব্যয় হচ্ছে ১৭ লাখ টাকা।
গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৪৬০টি বি-টাইপ পাবলিক টয়লেট স্থাপনের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, প্রতিটির নির্মাণ খরচ ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২৫ শহর প্রকল্পে ২০ লাখ টাকা করে ১৮০টি পাবলিক ল্যাট্রিন বানাতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১০০টি মোবাইল টয়লেটের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতিটির খরচ পড়বে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে আরএফএলসহ স্থানীয় বিভিন্ন উৎপাদকের আউটলেট ও ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত মোবাইল টয়লেটের দাম ২৭ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে।
বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস ঘুরে দেখা গেছে, চীন ও ভারতের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল টয়লেটের দামও ১ লাখ টাকার বেশি নয়।
শুধু টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রেই নয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্প প্রস্তাবনায় গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে- প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এ প্রকল্পে ১ হাজার ৭৫০টি ডাবল প্ল্যাটফর্মসহ গভীর হ্যান্ড টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য চাওয়া হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। এতে প্রতিটির খরচ পড়ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে ৯ হাজার ১০০টি সাবমারসিবল পাম্প এবং রেইজড প্ল্যাটফর্মসহ গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গত বছরের মে-জুন মাসের বন্যায় দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সিলেটের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিদিনের বাংলাদেশের।
তিনি জানান, দেড় ইঞ্চি ব্যাস ও ২৫০ মিটার গভীরতার নলকূপ স্থাপন করতে সাধারণত ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী বন্যাকবলিত এলাকায় টাইলস ফিটিংসহ পাবলিক টয়লেট নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে ২০-২২ লাখ টাকা।
তাহলে স্থানীয় সরকারের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে টয়লেট ও নলকূপ স্থাপনে ব্যয় কেন বেশি ধরা হয়েছে- সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবে বেশ কিছু খাতে বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব সংশোধন করে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে বলা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বন্যাকবলিত সিলেট ও বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার ৬৩ উপজেলার ৪৯৫টি ইউনিয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাদের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৩৩৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২৮৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা (২ কোটি ৮০ লাখ ডলার) ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ৫৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকার জোগান দেবে সরকার।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাম্প্রতিককালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ সুবিধা পাবে এবং ভবিষ্যতেও বন্যায় দুর্ভোগ ঠেকাতে তা সহায়ক হবে।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে বন্যাকালীন ও পরবর্তী সময়ে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে জরুরি সহায়তাও দেওয়া যাবে। অনুমোদন পেলে প্রকল্প বাস্তবায়নে আড়াই বছর লাগবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) তুষার মোহন সাধু খা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের সংশোধন করা হবে। এবং ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে চাওয়ার বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়গুলো ভালো করে খতিয়ে দেখা দরকার। যারা এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তারা হয়তো যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ করতেই এ ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা জরুরি। নইলে এ ধরনের অন্যায় চলতেই থাকবে।
সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ