বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: সিলেটের গোলাপগঞ্জের ধারাবহর গ্রামের রফিকুল ইসলামের নামে টিলা কাটার দায়ে নোটিশ পাঠিয়েছে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর। বিভাগীয় পরিচালক এমরান আহমদের স্বাক্ষরে গত ৯ জানুয়ারি তার নামে নোটিশ গেছে। নোটিশে এমনকি পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে ক্ষতিপূরণ আরোপ বা মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়।
অথচ রফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে সাত বছরেরও বেশি সময় আগে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এমন নোটিশে হতবাক রফিকুল ইসলামের স্বজনরা। গত ১৫ জানুয়ারি সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন ছেলে ফখরুল ইসলাম।
অভিযোগ, ধারাবহর গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে টিলা কেটে শ্রেণি পরিবর্তনের নেপথ্যে থাকা মূল কুশীলবদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে মৃত রফিকুল ইসলামসহ ৭জনকে এ নোটিশ প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি পরিবেশের বিভাগীয় পরিচালক এমরান আহমদ স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠানোর হয় মৃত রফিকুল ইসলামসহ ৭ জনের নামে। নোটিশে তাদের বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ধারাবহর মৌজার বিভিন্ন দাগে দৃশ্যমান টিলা রকম ভূমি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করার অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নোটিশে তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হতে বলা হয়।
জানা গেছে, আইনি জটিলতার ভয়ে নির্ধারিত তারিখে কেউই হাজির হননি। তাদের অনুপস্থিতিতে শুনানি হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
পরিবেশের নোটিশ হস্তান্তরকারী পরিবশে সিলেট বিভাগীয় অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ বলেন, যার নামে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তিনি মৃত না জীবিত তা আমার জানা নেই। আমাকে শুধু অফিস থেকে নোটিশ দেয়ার কথা জানালে আমি নোটিশ নিয়ে এসেছি।
রফিকুল ইসলামের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট মৃত্যু হয়। রফিকুল ইসলামের। গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. জাহির আহমদ মৃত রফিকুল ইসলামের পরিবারের কাছে একটি হাতের লেখা মৃত্যু সনদ দেন।
পরবর্তীতে রফিকুল ইসলামের পরিবার গোলাপগঞ্জের পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মৃত্যু সনদ (নং-০০০৩২) গ্রহণ করেন।
মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম শাকিল বলেন, আমার বাবা মারা গেছেন ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তার নামে টিলা কাটার অভিযোগে নোটিশ দিয়ে নির্ধারিত তারিখ হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নোটিশ পেয়ে আমরা হতবাক হই। এরপর প্রতিকার চেয়ে একটি অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরে দাখিল করলেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। যে ৭ জনের নামে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাদের একজন মৃত রফিকুল ইসলামের
ভাতিজা সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা কোনো সময় টিলা কাটিনি। তবুও একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই এবং যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক এমরান আহমদ জানিয়েছেন, গোলাপগঞ্জের ইউএনও অফিস থেকে টিলা কাটা বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে পত্র পাঠানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশে পাঠানো হয় পত্র। পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে রফিকুল ইসলামসহ ৭ জনকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক এমরান আহমদ আরও বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পত্র আসলে আমরা নোটিশ দিয়েছি। এতে যাচাই-বাছাই করার সুযোগও হয়নি। তবে পরবর্তীতে মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে একটি অভিযোগ অফিসে দাখিল করলে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। তবে নোটিশে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নির্ধারিত তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তরের হাজির হওয়ার কথা থাকলেও কেউ আসায় শুনানী হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্রঃ একাত্তরের কথা