বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার মুছারগাঁওয়ে তছন মিয়ার কবর নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকায়। স্বজনরা জোরপূর্বক পূর্ব-পশ্চিম দিকনির্দেশনা করে মাটি খুঁড়ে কবর দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার চার দিনের মাথায় গতকাল স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এতে হস্তক্ষেপ করেছেন। বিষয়টির সুরাহা করে মুসলিম রীতি অনুযায়ী উত্তর-দক্ষিণ দিকনির্দেশনায় ফের কবর দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। রাতেই বিষয়টির সুরাহা হচ্ছে বলে জানান তারা। মুছারগাঁও সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। ওই গ্রামের তছন মিয়া গত বুধবার মারা যান। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।
এক ঘরেই বন্দি থাকতেন তিনি। মারা যাওয়ার পর গ্রামের মানুষকে বিষয়টি জানানো হয়। এবং ওই দিন বাদ আসর স্থানীয় শাহ মঞ্জু জামে মসজিদের পাশের গোরস্থানে কবর দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গ্রামের পারভেজ আহমদ জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের মুরুব্বি ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে এলাকার একদল স্বেচ্ছাসেবক কবর খননের কাজ করে থাকেন। মারা যাওয়া ব্যক্তির কবর খননের জন্য তারা এগিয়ে এলেও তছন মিয়ার স্বজন মাহবুবুর রহমান চৌধুরী তাদের পূর্ব-পশ্চিম দিকনির্দেশনায় কবর খননের নির্দেশ দেন। এতে রাজি হননি গ্রামের ফরিদ মিয়া সহ অন্যরা। কবর না খুঁড়ে তারা চলে যান। পরে মাহবুবুর রহমান সহ স্বজনরা পূর্ব-পশ্চিম দিক করে কবর খুঁড়ে তছন মিয়ার লাশ সমাহিত করেন। এবং লাশের পা পশ্চিম দিকে ছিল। এ সময় গ্রামের কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও স্বজনরা এতে কর্ণপাত করেননি। গ্রামের মানুষের বাধা উপেক্ষা করে জোরপূর্বক লাশ দাফন করা হয়। এদিকে- বিষয়টি জানার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে মসজিদে পঞ্চায়েতে আলোচনা হয়। পরে মসজিদের খতিব মাওলানা ফয়েজ আহমদ সহ এলাকার মানুষ সরজমিন কবর দেখতে যান। এ সময় তারা গিয়ে কবরটি পূর্ব-পশ্চিম দিকনির্দেশনায় রয়েছে বলে দেখতে পান। এ সময় মসজিদের খতিব জানিয়েছেন- ‘লাশের আত্মীয়স্বজন অনেকটা জোরপূর্বক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
আমরা এলাকার মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। তিনি বলেন, ‘এটা ইসলামের বিধানের সঙ্গে মানানসই নয়। যারা এটা ঘটিয়েছে এর প্রতিকার তাদেরকেই করতে হবে বলে জানান তিনি।’ ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল শনিবার বিকালে এলাকায় যান স্থানীয় ২৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাকবীরুল ইসলাম পিন্টু। তিনি প্রথমে মসজিদে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এলাকার লোকজন তাকে অবগত করেন; মারা যাওয়া তছনের স্বজন মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর নির্দেশে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এরপর থেকে মাহবুবুর রহমান অনেকটা আড়ালে রয়েছেন। তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তছন মিয়া ও তার বড় ভাই বছন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সাবেক সরকারি চাকুরে মাহবুবুর রহমান বাড়িতে বসবাস করছেন। তছনের মা-ও ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। এ নিয়ে এলাকায় নানা কথা রটনা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত কেউ খতিয়ে দেখেননি। এই অবস্থায় প্রায় ২০ বছর আগে তছন মিয়া ও বছন মিয়া স্বজন মাহবুবুর রহমানের কাছে তাদের সম্পত্তির অংশ দাবি করেন। এরপর কৌশলে যক্ষ্মা রোগী সাজিয়ে তছনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে পাগল সাজিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দি অবস্থায়ই তছনকে খাবার দেয়া হতো। বুধবার মাহবুবুর রহমান বাড়িতে থাকাকালেই তছন মিয়ার মৃত্যু হয়।
পরে তাকে মসজিদের পাশের গোরস্থানে কবর দেয়া হয় বলে জানান তারা। কিন্তু কবরটি পূর্ব-পশ্চিম দিকনির্দেশনায় কেন?- সেটি নিয়ে নানা কৌতূহল এলাকায়। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল বিকালে কাউন্সিলর যান মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর বাসায়। এ সময় কাউন্সিলরের মোবাইল ফোনে কথা হয় মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কবরটি কোন দিকনির্দেশনায় দেয়া হয়েছে সেটি তিনি জানেন না। যারা কবর দিয়েছে তারা সেটি বলতে পারবে। তিনি কবর দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে বাসায় চলে আসেন। এবং অসুস্থ থাকার কারণে এখনো বাধসাতেই আছেন। তছন মিয়া, তার ভাই বছন মিয়া ও তাদের দুই ভাইয়ের মা তার পিতা আখলাকুল আম্বিয়া চৌধুরীর আশ্রয়ে ছিল। এ কারণে তারা এখনো বসবাস করছে। এদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর পিন্টু জানিয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি বিতর্কিত। এলাকায় এ নিয়ে ক্ষোভ আছে। মুসলিম শরিয়াহ অনুযায়ী তছনের কবর উত্তর-দক্ষিণে করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এলাকার সবার সর্বসম্মতিক্রমে সেটি করা হবে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। শনিবার রাতেই সে ব্যবস্থা করা হবে। এ নিয়ে এলাকায় কোনো বিতর্ক রাখতে চান না বলে জানান তিনি।
পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকেও অবগত করা হবে। তাদের মতামতও চাওয়া হবে। এ ঘটনায় এলাকার প্রতিবাদী যুবক নাজমুল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা জেনেছি মাহবুবুর রহমান নিজেই এ কাজটি করেছেন। প্রথমে এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা কবর খুঁড়তে গিয়েছিল। তাদেরকে পূর্ব-পশ্চিমে কবর খুঁড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করা হলে ওরা চলে আসে। পরে লাশের স্বজনরা নিজেরাই কবর খুঁড়ে লাশ দাফন করেন।’ তিনি দাবি করেন- ‘তছনকে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পাগল সাজিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ঘটনাটি মর্মান্তিক। এটি হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। এ কারণে পুরো ঘটনাটি তদন্তের দাবি রাখে। এ জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করার দাবি জানান। এ ছাড়া, তছনের বড় ভাই বছন মিয়াকে ‘দাস’ হিসেবে ঘরে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন।’ তবে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন- ‘আমি লন্ডন থেকে বাড়ি ফেরার পর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছি। বছন ও তছন আমাদের বাড়িতে বসবাস করছে। আমরা কখনো তাদের অন্য চোখে দেখিনি। স্বজনের মতোই আমরা একসঙ্গে বসবাস করছি।’
সূত্র : মানবজমিন