Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-10-31T19:35:50Z
সিলেট

বড় সংকটের মুখে সিলেট !

বিজ্ঞাপন

স্টাফ রিপোর্ট : সিলেট নগরের সাগরদিঘির পাড়, লালদিঘির পাড়, রামের দিঘির পাড়, চারাদিঘির পাড়, মাছুদিঘির পাড়-এলাকার নাম হলেও এখন এই সব নামে বাস্তবে কোনো দিঘির সেখানে অস্তিত্ব নেই। তবে একসময় ছিলো। গত চার দশকে দিঘি, জলাশয় হারিয়ে আস্তে আস্তে বদলে গেছে সিলেট নগর। দিঘি ভরাট করে সেখানে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক ভরাট হচ্ছে । ফলে প্রকৃতির কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা সিলেট নগর এখন বড় সংকটের মুখে।

পানি ধরে রাখার ও পানি সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলায় অল্প বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা।

সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী লাল দিঘি। এটি দখল করে গড়ে ওঠেছে সিলেটেরে সবচেয়ে পুরনো হকার্স মার্কেট। তবে দিঘির গুরুত্ব এই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের উপলব্ধি করতে হয়েছে গত মে মাসে ঘটে যাওয়া অগ্নিকা-ের সময়। ফায়ার সার্ভিস শতচেষ্টা করেও পানির অভাবে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। ততক্ষণে পুড়ে যায় অর্ধশত দোকান।

লাল দিঘির মতোই নগরীর অধিকাংশ পুকুর, দিঘি ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। যার অধিকাংশতেই নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। ফলে কোথাও অগ্নিকা-ের ঘটনায় দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। এমন জরুরি মুহূর্তের বিবেচনায় ফায়ার সার্ভিস সিসিক কর্তৃপক্ষকে ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নির্মাণের প্রস্তাব দিলেও এখনও নেই দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি।

এছাড়া সাম্প্রতিককালে কাজীটুলা এলাকার কাজী দিঘির চারপাশে মাটি ভরাট করা হয়েছে। ধোপাদিঘির পাড় ঘেঁষে সিটি করপোরেশন ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবনসহ কিছু প্রকল্পের কাজ করছে। সেখানেও দিঘি ভরাটের ঘটনা ঘটেছে। সোনারপাড়া জামে মসজিদের পুকুরটিও ভরাট করেছে সিটি করপোরেশন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর সিলেট মহানগরীর পুকুর-দীঘিসহ সকল জলাশয়ের তালিকা সংগ্রহে কমিটি গঠন করা হয়। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত কমিটি গঠনের ওই পত্রে বলা হয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরের জলাশয় সংরক্ষণে করণীয় বিষয়ে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেট মহানগরীর পুকুর-দীঘিসহ সকল জলাশয়ের তালিকা সংগ্রহে কমিটি গঠন করা হল। ৩০ দিনের মধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক সিলেট মহানগরীর পুকুর-দীঘিসহ সকল জলাশয়ের তালিকা সংগ্রহ করে মেয়রের নিকট জমা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে তাঁর ফলাফল কি তা আর জানা যায়নি।

একটি সূত্র বলছে, নগরে পুকুর, দিঘি, খালসহ মোট জলাভূমির পরিমাণ ৫৪৮ দশমিক ৮ হেক্টর। যেসব পুকুর-দিঘি এখনো টিকে আছে, সেসবও আংশিক ভরাটের ফলে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রকাশ্যে জলাধার ভরাট করা হলেও তা রোধ করছে না কেউ।

এদিকে, সিলেট নগরীর অধিকাংশ বহুতল ভবনেই নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। অন্যদিকে দখলবাণিজ্য আর ভবন নির্মাণে ভরাট হয়ে গেছে অধিকাংশ জলাশয়। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসকে পড়তে হয় পানি সংকটে। পানির যোগান দিতে ফায়ার সার্ভিস হাইড্রেন্ট পয়েন্ট তৈরির সুপারিশ করলেও বাসাবাড়িতে হাইড্রেন্ট রিজার্ভ নিশ্চিতকে গুরুত্ব দিচ্ছে সিটি করপোরেশন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন সময় বলেছেন, আগুন নেভানোর জন্য সবচেয়ে জরুরী পানি। কিন্তু সিলেট নগরীর অধিকাংশ জায়গাতেই পানির উৎস নেই। যার কারণে কোথাও আগুন লাগলে সমস্যা দেখা দেয়। তাই হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নির্মাণের জন্য গত দুবছর আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছেন তারা।

অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় দ্রুত পানি সরবরাহের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পাম্পযুক্ত পানিকল) স্থাপন করা খুবই জরুরি। কারণ, ফায়ার হাইড্রেন্ট হচ্ছে পানির একটি সংযোগ উৎস। যা পানির প্রধান উৎসের সাথে যুক্ত থাকে। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এই উৎস থেকে পানি ব্যবহার করা যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে লম্বা পাইপের সাহায্যে ইচ্ছেমতো যেকোনো দূরত্বে পানি সরবরাহ করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের প্রায় সব শহরে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে এ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীতে আজও ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। অথচ ফায়ার হাইড্রেন্ট মূলত স্থাপন করা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় ও যেসব রাস্তায় অগ্নিনির্বাপক গাড়ি সহজেই প্রবেশ করতে পারে না। ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত রাস্তাসহ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেখা দিতে পারে মহাবিপদ। তারা বলেন, ‘শুধু ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট হলেই হবে না। পরিকল্পনা আর ইমারত নির্মাণ আইনের বাস্তবায়ন খুব জরুরি। এতে আগুন লাগলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হবে। ফলে মহাবিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই এ বিষয়ে সিসিকের মনিটরিং জরুরি এবং জনসাধারণের সচেতনতাও প্রয়োজন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান গণমাধ্যমেকে বলেন, ‘হাইড্রেন্ট পয়েন্ট খুব কার্যকরী হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ আমাদের এখানে পানির প্রেসার সব সময় সমান থাকে না। তাই আমরা হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নির্মাণের বদলে বাসাবাড়িতে হাইড্রেন্ট রিজার্ভ নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছি।


বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ