বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) ভোর থেকে সিলেট জেলায় ৪৮ ঘণ্টার পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে। জেলার সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে দুই দিনের এই ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
এতেও কাজ না হলে পুরো বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে বলে বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে রবিবার (৩০ অক্টোবর) দিনভর সিলেটে মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে সে বৈঠকে বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন’ বলা হলেও শ্রমিক নেতারা বলছেন- ‘ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।’
সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলছেন- সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং এবং লোভাছড়া পাথর কোয়ারিগুলো থেকে বছরের পর বছর ধরে সারা দেশের পাথর সরবরাহ করা হয়ে আসছিল। প্রায় ১৫ লাখ ব্যবসায়ী-শ্রমিক ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক এ পাথর বৈধ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে কোয়ারি বন্ধ থাকার কারণে সিলেটের পরিবহন খাত- বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা পড়েছেন চরম সংকটে। ব্যবসায় পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। অধিকাংশ ট্রাক মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে অথবা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে তাদের গাড়ি কিনেছিলেন। গত ৫ বছর ধরে কোয়ারি বন্ধ থাকার কারণে ট্রাক মালিকদের পণ্য পরিবহনে ভাটা পড়েছে। এই অবস্থায় শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রবিবার বিকাল ৪টায় বৈঠকে বসেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের প্রতি ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তারা।
তবে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়- ‘বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বানের পর এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।’
জেলা প্রশাসনের সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া রবিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে রবিবার বিকাল ৪টায় আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখান মাননীয় জেলা প্রশাসক আমাদের জানান- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে এবং সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব নায়েব আলী মন্ডল বিদেশ সফরে রয়েছেন। আগামী ৩ নভেম্বর তাঁর দেশে আসার কথা রয়েছে। তিনি দেশে আসার পর পরই আমাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে এবং আমাদের দাবি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তত দিন পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত রাখার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। কিন্তু এ আহ্বানের বিপরীতে বলি- আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবো।’
মো. দিলু মিয়া বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পর রবিবার সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসি। এ বৈঠকে সবাই ধর্মঘট পালনের পক্ষে মতামত জানান। তাই সকলের মতামতের ভিত্তিতে সোমবার ভোর থেকেই সিলেট জেলায় টানা ২ দিনের পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে। এতেও কাজ না হলে ২ নভেম্বর থেকে পুরো বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু করতে বাধ্য হবো আমরা।’