বিজ্ঞাপন
হুমায়ুন কবির রুবেল : কোনো এক বিকেলে আড্ডার ছলে একত্রিত হওয়া। সেখান থেকেই পথচলা শুরু। হাঁটি হাঁটি পা পা করে গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব এখন ভরা যৌবনে। দীর্ঘ বা স্বল্প এ পথ পরিক্রমায় কাজের ঝুলি অনেক ভরা। কাজের ধারাবাহিকতায় অভিজ্ঞতাও কম নয়।
প্রতিষ্টার পর থেকে অনেক তুহমত, অপবাদ ও অপব্যাখ্যা মেনে নিতে হয়েছে। যদিও উপস্থিত মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে কিন্তু এসবের জবাব কাজের মাধ্যমেই হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসা ছিলো অপ্রত্যাশিত।
পাহাড়সম এ ভালোবাসাই ছিলো আমাদের পুঁজি, এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা, ময়দানে ঠিকে থাকার একমাত্র শক্তি। দৃঢ় মনোবল ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আজ এপর্যন্ত। কাজের মূল্যায়ন স্বরূপ আমরা ইতিমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর থেকে রেজিষ্ট্রেশন পেয়েছি যার নিবন্ধন নং-সিল-১৩৪১/১৯।
প্রতিষ্টার পর থেকে জাতীয় দিবস পালন, জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও প্রচারণা, রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়া, ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ক্যাম্প, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা, ঘর নির্মাণে সহায়তা, ছিন্নমূল পথশিশুদের মধ্যে নতুন কাপড় ও খাবার বিতরণ, এতিম ও অসহায়দের নিয়ে ইফতার মাহফিল, পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, ইফতার ও সাহরি সামগ্রী বিতরণ, ঈদ সামগ্রী বিতরণ, বৃক্ষরোপণ ও গাছের চারা বিতরণ সহ বেশ কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি।
করোনাকালীন সময়ের ভয়াবহ চিত্র অবশ্যই সবার মনে আছে। দিনদুপুরে শহরগুলোতে পিনপতন নীরবতা, ভয়ংকর পরিবেশ, সবার মধ্যেই ছিলো এক অজানা আতংক। মানুষের পকেটে টাকা ছিলো ঠিকই কিন্তু অজানা আতংকে বাজার সদাইয়ের অভাবে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। আর যারা দিনমজুর, মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত ছিলো তাদের আহাজারি দেখেছিলেন ক'জন?
এমনও করুণ পরিবেশের স্বাক্ষী আমরা যাদের পরিবারে নগদ অর্থ বিতরণ করে এক দরজা দিয়ে আমরা বাহির হয়েছি অন্য দরজা দিয়ে আমাদের আগেই বাজারে গিয়ে কর্তা পরিবারের জন্য বাজার সদাই করে নিয়ে এসেছেন।
সেসময় মানুষের ঘরে ঘরে আমরা খাদ্যসামগ্রী পৌছিয়ে দিয়েছি। ভ্রাম্যমাণ ফ্রি সবজি বিতরণ ক্যাম্প করেছি। সবজির জন্য অনেক ব্যাক্তিদের লাইনে দাঁড়াতে দেখেছি যারা নিকট অতীতে অনেক অসহায় পরিবারে নিজে খাদ্য সহায়তা বা অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন।
অক্সিজেনের কথা মনে আছে? অনেক বিত্তশালী ব্যাক্তিদেরও দেখেছি অক্সিজেনের অভাবে আহাজারি করতে। অনেক পরিবারে আমরা অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েছি যাদের পরিবার অক্সিজেন বিতরণ করার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু পরিস্থিতি তাদের অসহায় করে দিয়েছে। আবার অনেক রোগীকে আমরা অক্সিজেন ও ঔষধ সরবরাহ করে দিয়েছি যাদের পরিবারের সদস্য রোগীর কাছাকাছি আসতেও চান নি। কিন্তু আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সিকিউরিটির তোয়াক্কা না করে মানুষের সেবা করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের ধারে ধারে ঘুরেছি। ধাপে ধাপে বন্যা, কিন্তু আমরাও পিছু ছাড়িনি।
নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছি বানভাসি মানুষের তরে। থৈথৈ পানির মধ্যে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। ভয়াবহ বন্যায় উদ্ধারকাজেও আমাদের সমান তৎপরতা ছিলো।
সবশেষে গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ক্লাবের সকল সাধারণ সদস্য, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, প্রবাসী সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী ও উপদেষ্টা সহ সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমাদের আগামীর কার্যক্রম হবে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। সুন্দর ও মানবিক সমাজ বিনির্মানে হবো আমরা একে অপরের সহযোগী। এমন একটি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের জন্য দোয়া ও কল্যাণ কামনা করছি।
লেখক: হুমায়ুন কবির রুবেল
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব।