বিজ্ঞাপন
ডি এইচ মান্না : বাঙালি ভোজন রসিক- এ তথ্য সবারই জানা। বিশেষ সময়ে বা উৎসবে একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ধরনের খাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। আর পরিবেশগত কারণেও কারো কারো খাওয়ার ধরন-ধারণে থাকে নানা মাত্রা। এদিক থেকে সিলেটের ঐতিহ্য বেশ পুরাতন। এই অঞ্চলের এলাকাভেদে রয়েছে খাবারের ভিন্ন ভিন্ন জনপ্রিয় আইটেম। একেক এলাকার এক-একটি খাবার তাদের ঐতিহ্য বহন করে।
সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাবার ভুনা খিচুড়ি। পবিত্র রমজান মাসে ভুনা খিচুড়ি ছাড়া সিলেটের রোজাদারদের চলেই না। কেবল রমজানে নয়, বছরজুড়ে এই খাবারটির চাহিদা থাকে সিলেটবাসীদের কাছে। সিলেটের হেতিমগঞ্জের বিখ্যাত কিছু খিচুড়ি সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-
সিলেটের হেতিমগঞ্জ বাজার। গোলাপগঞ্জ উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের পাশঘেরা অবস্থিত এই বাজার মাছের জন্য বিখ্যাত। তবে এই বাজারের বিক্রি হওয়া ভুনা খিচুড়ির জনপ্রিয়তাও কম নয়। তাই কেউ কেউ সিলেটের হেতিমগঞ্জকে ভুনা খিচুড়ির তীর্থস্থান বলে থাকেন। বিকেল থেকে রাত ৮টার মধ্যেই বাজারের সব দোকানের ভুনা খিচুড়ি বিক্রি হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ের পর কেউ খিচুড়ি খেতে গেলে তাকে হতাশ হয়ে ফিরতে হবে।
আলমগীর মিয়ার খিচুড়ি : হেতিমগঞ্জ বাজারের অন্যতম ভুনা খিচুড়ি বিক্রেতা আলমগীর মিয়া। জনপ্রিয়তায় তার দোকান বাজারের অন্যতম। দীর্ঘ ১২ বছর থেকে এখানে খিচুড়ি বিক্রি করছেন তিনি। প্রথম দিকে এখানকার খিচুড়ি এত জনপ্রিয় ছিল না। শুধু বাজারের দোকানদার ও আগত ক্রেতারাই ছিল এখানকার মূলত খদ্দের। কিন্তু দিনদিন এখানকার খিচুড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে বিভিন্ন জায়গায় থেকে শুধু খিচুড়ি খেতেই অনেক ক্রেতা আসেন।
দৈনিক ৮/১০ হাজার টাকার ভুনা খিচুড়ি বিক্রি করেন আলমগীর। এই খিচুড়ি বিক্রেতা জানান, বাজারের অধিকাংশ দোকানই এর চেয়ে সামান্য কমবেশ বিক্রি করে। কোনো দোকানদারই তৈরিকৃত খিচুড়ি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া লাগে না। বাজারেই তারা সব খিচুড়ি বিক্রি করে বাড়িতে যান।
সাদেক আলী রেস্টুরেন্ট : এই বাজারের সবচেয়ে বেশি খিচুড়ি বিক্রি হয় সাদেক আলীর। তিনি দৈনিক কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ভুনা খিচুড়ি বিক্রি করে থাকেন। তাকে দৈনিক বেশ কিছু অর্ডার বাইরে ডেলিভারি করতে হয়। আর দোকানের বিক্রি তো আছেই।
সাদেকের দোকানের খিচুড়ি এত জনপ্রিয় যে, তাকে দিনে কখনো কখনো ২/৩ বার রান্না করতে হয়। তারপরেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সব খিচুড়ি বিক্রি হয়ে যায়। তার দোকানে সন্ধ্যার পর অনেকে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। খিচুড়ির পাশাপাশি আরও অনেক ফাস্টফুড আইটেম বিক্রি করে থাকেন তিনি।
মেলে অল্প দামে : সিলেট শহরের যেকোনো অভিজাত রেস্তোরাঁর চেয়ে এখানকার খিচুড়ি দুই থেকে তিনগুণ কম টাকায় খাওয়া যায়। মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় এখানে ডিম, ছোলা, পিয়াজু, বেগুনী, আলুর চপসহ ভুনা খিচুড়ি খাওয়া যায়। এই বাজারে বিক্রি হওয়া এসব ভুনা খিচুড়ি গুণমানে কোনোভাবেই পিছনে ফেলা যাবে না।
হেতিমগঞ্জের খিচুড়ি প্রেমিকদের মন্তব্য : গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা হেমায়েত হোসেন জানান, এখানে প্রায় ৭ বছর থেকে সময় পেলেই খিচুড়ি খেতে আসেন। এখানকার দোকানগুলোর খাবার তার পছন্দের শীর্ষে।
মোহাইমিন চৌধুরী নামে একজন খিচুড়িপ্রেমী বলেন, ‘এখানকার খিচুড়ি মুখরোচক।’ তবে তিনি এখানকার বসার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, রাস্তার পাশের খিচুড়ির দোকানগুলোর কাছেই মাছ বাজার হওয়ায় পরিবেশটা তার কাছে তেমন ভালো লাগেনি।
সাজন আহমদ নামের আরেক খিচুড়ি প্রেমিক বলেন, ‘আমি এখানকার নিয়মিত ক্রেতা। সন্ধ্যার পর বন্ধুদের নিয়ে এখানে আমি নিয়মিত খিচুড়ি খেতে আসি।’