বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট বিভাগে মানুষের মাঝে সম্প্রতি বেড়েছে আত্মহননের প্রবণতা। পারিবারিক বিরোধ, নিসঙ্গতা, পরকীয়া, প্রেম বাধা ও দারিদ্র্যতাসহ নানা কারণে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী এমনকি কিশোররাও নিয়ে নিচ্ছেন নিজের প্রাণ।
সর্বশেষ সিলেট মহানগরীর বাগবাড়ি এলাকায় পরিবারিক কলহের জের ধরে পারুল বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাগবাড়ি এলাকার ফেনু মিয়ার কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে থানায় নিয়ে গেছে।
কোতোয়ালি থানাপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কলোনির বাসিন্দা মো. শুকুর আলী (৪২) ও তার স্ত্রী পারুল বেগমের মধ্যে বিভিন্ন কারণে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শনিবার বিকেলে একইভাবে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধলে সবার অগোচরে পারুল বেগম গলায় বিছানার চাঁদর দিয়ে গলায় ফাঁস দেন।
বিষয়টি প্রতিবেশীদের নজরে পড়লে তারা পারুলকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে মৃত্যু হয়।
এছাড়াও শুক্র এবং শনিবার ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মৌলভীবাজারের কুলাইড়ায় এক চা শ্রমিক এবং সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গোপাল নাইড়ু (৪০) নামে এক চা শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে উপজেলার টিলাগাঁওয়ের লংলা চা বাগানের লালপুর লাইন বস্তি এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। গোপাল ওই বাগানে চা শ্রমিকের কাজ করতেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে কোনো একসময় গোপাল তার পরিবারের সদস্যদের অজান্তে বসতঘরের পাশে একটি বড়ই গাছে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
শনিবার সকালে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় গোপালকে তার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপুরে লাশ উদ্ধার করে।
ওসি আরও জানান, গোপালের পরিবারের সদস্যদের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপরদিকে, জগন্নাথপুরে দাম্পত্যজীবনে পর পর চার কন্যা সন্তান জন্ম দেন গৃহবধূ শিপা বেগম (২৯)। কিন্তু এতে খুশি হননি স্বামী সুমন মিয়া। তার চাই পুত্র সন্তান। এ নিয়ে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হতে হয় হতভাগ্য গৃহবধূকে। বাড়তে থাকে নির্যাতনের মাত্রা। শেষমেষ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষ পান করে আত্মহত্যা করলেন ওই চার সন্তানের জননী। শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের বড়কাপন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১০ বছর পূর্বেক জগন্নাথপুর পৌরসভার ইকড়ছই এলাকার মৃত মকদ্দুছ মিয়ার মেয়ের সঙ্গে বড়কাপন গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদ এর ছেলে সুমন মিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দাম্পত্যজীবন সুখের ছিল। বিয়ের প্রথম বছরেই তাদের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
তারা জানান, বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্মের পর। তারপর একটি ছেলের আশায় পরপর আরো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একে একে চার কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্বামী সুমন মিয়া। প্রায়শই তিনি স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করতেন।
এরপরও স্বামীর সংসারে সুখে থাকার জন্য বছরখানেক আগে শিপা বেগমের মা মনু বেগম তার সৌদি প্রবাসী মেয়ের কাছ থেকে মেয়ের জামাই সুমন মিয়াকে ২ লাখ টাকা ধার দেন। এতে করে শিপা বেগমের সংসারে সুখের চেয়ে আরো দুঃখের ছায়া নেমে আসে।
মাসখানেক আগে ধার দেওয়া ওই টাকা সুমন মিয়ার কাছে ফেরত চাওয়া হলে, শিপা বেগমের ওপর শুরু হয় স্বামীর অমানবিক নির্যাতন। আর সেই নির্যাতন সইতে না পেরে শুক্রবার বিকেলে বিষ পান করেন ৪ সন্তানের ওই জননী। পরে পরিবারের লোকজন শিপা বেগমকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিপা বেগমের মা মনু বেগম বলেন, ‘কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া ছিল আমার মেয়ের অপরাধ। ছেলে সন্তান জন্ম হয় না বলে প্রায়ই আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করত ওর স্বামী। মেয়ের সুখের জন্য জামাইকে ব্যবসার জন্য ২ লাখ টাকা ধার দেই। আর সেই টাকা চাওয়াতে আমার মেয়েকে নির্যাতন করতে শুরু করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ওর মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, শিপা বেগমের লাশ এখনও সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্ত করা হবে।
সূত্র : সিলেট ভিউ