বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সিআইজি মৎস্য খামারিদের মাঝে মেয়াদোত্তীর্ণ মৎস্য খাবার বিতরণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ফিসারিতে মাছের খাবার দিতে গিয়ে খামারিরা মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি বুঝতে পারেন। এতে খামারিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মৎস্য খামারি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট মৎস্য অধিদপ্তরের বড়লেখা কার্যালয়ের উদ্যোগে বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২৭ জন সিআইজি মৎস্য খামারির মাঝে মৎস্য খাবার বিতরণ করা হয়।
উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বিতরণ অনুষ্ঠানে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন প্রমুখ।
বিতরণের দিন ২৭ জন মৎস্য খামারির প্রত্যেককে ৭ বস্তা করে ১৮৯ বস্তা কার্প ও তেলাপিয়া মাছের খাবার দেওয়া হয়। প্রত্যেক খামারি ১৪০ কেজি করে মাছের খাবার পেয়েছেন। তবে অধিকাংশ বস্তার মেয়াদ বিতরণের আগেই শেষ হয়েছে।
নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা ও মৎস্য খামারি সালেহ আহমদ বলেন, ‘১৬ আগস্ট আমি ৭ বস্তা মাছের খাবার পেয়েছি। এরমধ্যে ৫ বস্তার মেয়াদ ১৪ আগস্টেই শেষ হয়ে গেছে। ১টির মেয়াদ শেষের তারিখ ছিল ১৬ আগস্টই। অপরটির মেয়াদ ২২ আগস্ট শেষ হবে। ফিসারিতে মাছের খাবার দিতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি চোখে পড়ে। এগুলো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের অনুপযোগী। অন্তত ১ মাস মেয়াদ থাকতে মাছকে খাবার দিতে হয়। মৎস্য বিভাগের গাফিলতিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
দাসেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের মৎস্য খামারি আবুল খায়ের বলেন, ‘আমি ৭ বস্তা মাছের খাবার পেয়েছি। এগুলোর মেয়াদ ৭-৮ আগস্টেই শেষ হয়েছে। খাবারগুলো মাছকে দেওয়ার অনুপযোগী। মেয়াদ না দেখে খাবার দিলে মাছের ক্ষতি অনেক হত। খামারিদের প্রতি মৎস্য বিভাগের চরম অবেহলা এটা।’
একই রকম কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের সিআইজি মৎস্য খামারি ফয়ছল আহমদ। তিনি বলেন, ‘১৬ আগস্ট মাছের খাবার পেয়েছি। এদিনই মেয়াদ চলে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারগুলো মৎস্য বিভাগের দেওয়া ঠিক হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মৎস্য খামারি বলেন, ‘অনেক খামারি মৎস্য কর্মকর্তার ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কারণ পরবর্তীতে কোনো প্রকল্প আসলে মৎস্য কর্মকর্তা তাদের (খামারিদের) বাদ দিয়ে অন্যদের দেবেন।’
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করে বড়লেখা উপজেলা জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘এগুলো বন্যার সময় কিনেছিলাম। মেয়াদ যে চলে গেছে খেয়াল করিনি। মেয়াদ না দেখে বিতরণ করাটা ঠিক হয়নি। মৎস্য চাষীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। রবি-সোমবারে বস্তাগুলো ফেরত এনে নতুন খাবার দেব।’
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী সিলেটটুডেকে বলেন, ‘বিষয়টি খুব দুঃখজনক। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি দ্রত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের থেকে ফেরত এনে নতুনভাবে দেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ মৎস্য খাবার বিতরণের কোনো সুযোগ নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার মাছকে দিলে খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যিনি উপকরণ বিতরণ করবেন এটা দেখা তার নৈতিক দায়িত্ব। সঠিকভাবে দেখে বিতরণ করা উচিত ছিল। এগুলো ফেরত এনে খামারিদের নতুনভাবে দেওয়ার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
সূত্র : সিলেট টুডে