বিজ্ঞাপন
ডি এইচ মান্না : মুড়া কচু দেশের মানুষের কাছে খুবই সাধারণ একটি সবজি। কিন্তু সিলেটে বিশেষত্ব রয়েছে মুড়া কচুর। মুড়া কচুর জন্য সিলেটের ফুলবাড়ি দীর্ঘকাল থেকেই বিখ্যাত। ফুলবাড়ির মুড়া কচু নিজস্ব গুণে পরিচিত দেশে- বিদেশে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ফুলবাড়িতে মুড়া কচুর ফলন হয়েছে ব্যাপক। মুড়া কচু এবং কচুর লতি বিক্রি করে করেই জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক কৃষক । কেউ কেউ বংশপরম্পরায় এই পেশায় রয়েছেন দীর্ঘদিন থেকেই।
সিলেটের সবখানে ফুলবাড়ি মুড়া কচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ফুলবাড়ি একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম এটি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৩নং ফুলাবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত। ফুলবাড়ি গ্রামের নাম অনুসারে ইউনিয়নের নাম ফুলবাড়ি হয়েছে। সিলেটের অনেক বাজারেই মুড়া কচু পাওয়া গেলেও ফুলবাড়ির বড় মোকামে এখন নিয়মিত বসে মুড়া কচুর হাট । বড় মোকাম জামে মসজিদের কাছেই সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের পাশে নিয়মিত বসে এই মুড়া কচুর হাট। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই হাটে যে কেউ আসতে পারবে সিলেটের কদমতলী থেকে বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশা যোগে। গোলাপগঞ্জের বড় মোকামে নামার পর ভাড়া নিবে জনপ্রতি মাত্র ৩০ টাকা। প্রতিদিনের এই সিজনাল হাট সকাল ৯থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে।
ফুলবাড়ির মুড়া কচুর এই হাটের অন্যতম ব্যবসায়ী ফরমান আলী তিনি এই পেশার সাথে প্রায় জড়িত প্রায় ১৫বছর যাবৎ। তিনি বলেন, ফুলবাড়ির এই মুড়া কচু শুধু সিলেটে বিখ্যাত নয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ উন্নত বিশ্বেও রয়েছে এর খ্যাতি। তিনি বলেন, বর্তমানে কচুর দাম কিছুটা কম হলেও কচুর লতি বিক্রি করে ভালো আয় হচ্ছে তাদের। কারণ মুড়া কচু মাস দু’এক পর থেকে লতা দিতে থাকে এবং মুড়া কচুর চেয়ে তখন লতার মূল্য বেশী পাওয়া যায়। তিনি জানান, বর্তমানে মুড়া কচুর হালি ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হলেও কচুর লতি প্রতি আটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, কষ্টের তুলনায় দাম কম পাওয়ায় দিনদিন এই পেশা থেকে মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। একসময়ে ফুলবাড়ি গ্রামে অনেকে কৃষক মুড়া কচুর চাষ করলেও বর্তমানে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন কৃষক এ-কচুর চাষের সাথে জড়িত আছেন।
এই হাটের ক্রেতা ও ফুলবাড়ি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা পারভেজ আহমদ বলেন, আমি ছোট বেলায় যে পরিমাণ মুড়া কচুর চাষ ও বিকিকিনি দেখেছি তা আজও চোখে ভাসে। বর্তমানে আমাদের গ্রামে মুড়া কচুর চাষ অনেকটা কমেছে। তিনি বলেন, ফুলবাড়ি ঐতিহ্য হচ্ছে মুড়া কচু কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা এই ঐতিহ্য হারাতে বসেছি।
কচুর মুড়ার মূল, লতি, কান্ড ও পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কচুতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, লৌহ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে। কার্ডিওভাস্কুলার রোগ ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ছবি : জি ভয়েস টোয়েন্টিফোর |
• সিলেটে কিভাবে রান্না হয় মুড়া কচু ?
মুড়া কচু এক এক জায়গায় এক এক ভাবে রান্না করা হলেও সিলেটে সাধারণত রান্না হয় শুঁটকি মাছের সাথে চিংড়ি দিয়ে।
এটি ভোজনরসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় একটি খাবার। রান্নার পর এই খাবারের স্বাদ আর ঘ্রাণ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
• সিলেটে কিভাবে কচুর লতি রান্না হয়.?
সিলেটে সর্বমহলে কচুর লতির রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। সিলেটে সাধারণত লতির সাথেও শুঁটকি মাছ ও চিংড়ি দিয়ে রান্না করা হয়। তবে এই খাবারে নাগামরিচ ও কাঁঠাল বিচি যোগ করার পর স্বাদে আসে ভিন্নতা।
মুড়া কচুর চাষাবাদ : মুড়া কচু গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে উৎপাদিত হয় অন্যান্য এলাকার চেয়ে তুলনামূলক বেশি।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত নিচু, ডোবা দোআশ ও পলি দোআশ মাটিতে মুড়া কচু উৎপাদিত হয়ে থাকে। অনেক কৃষক বেশি মূল্যে বিক্রি করার লক্ষ্যে চারা রোপণ করেন কার্তিক মাসে। তাদের এই চারা বিক্রির উপযোগী হয় ৩/৪ মাস পর। অর্থাৎ তারা বৈশাখ মাসেই বাজারে তুলেন তাদের এই মুড়া কচু। সে সময় তুলনামূলক দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। সিলেটের বাজারে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এসব মুড়া কচু পাওয়া যায়।
দিনদিন কমেছে মুড়া কচুর চাষাবাদ : নিচুভূমি ও জলাশয় দিনদিন কমে যাওয়ার ফলে কচু ও মুড়ার ফলন দিনদিন কমে যাচ্ছে। মুড়া-কচুর চাষের উপযোগী জমি ভরাট করে বাসাবাড়ি নির্মাণ করায় এসব সবজি চাষের জমি আগের মত নেই। একসময়ে ফুলবাড়িতে মুড়া কচু চাষ করতেন হাজারও কৃষক।
দিনদিন চাষের জমি অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় এখন আর গোলাপগঞ্জে আগের মত মুড়া কচুর চাষ হয় না। তবে এখনও কিছু সংখ্যক কৃষক মুড়া কচুর এই চাষাবাদে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে ফুলবাড়ির উৎপাদিত মুড়া কচু প্রতিদিন সিলেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।