বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : বিয়ানীবাজারে মামলার এক পলাতক আসামিকে পানিতে ফেলে আঘাত করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশের দাবি, গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে ধরতে শনিবার (২৮ মে) পুলিশ অভিযান চালালে দুলাল আহমদ (৪০) নামে ওই ব্যক্তি পানিতে ঝাঁপ দেন। পরে পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি। তাদের ধারণা ছিল, দুলাল ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে পালিয়ে গেছেন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের পিরেরচকের কদমআনি বিল থেকে দুলালের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি পিরেরচক গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের বড় ছেলে। দুলাল প্রথম স্ত্রীর করা একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি ছিলেন।
ঘটনার খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুলাল আহমদ শনিবার বিকেলে স্থানীয় কুশিটিকি সেতুর উত্তর হাওরে কদমআনি বিলে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়েছিলেন। নৌকাবাইচ শুরুর আগে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ দুলালের পাশে দাঁড়ানো যুবককে নাম জিজ্ঞেস করতেই দুলাল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি হাওরের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতে থাকলে পুলিশ সদস্যরা নৌকায় তার পিছু নেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
রোববার সকালে গ্রামের লোকজন বিলে মাছ শিকারে গেলে দুলালের ভেসে ওঠা মরদেহ দেখতে পেয়ে স্বজনদের খবর দেন। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ যে নৌকা দিয়ে দুলালের পিছু নিয়েছিল সে নৌকার লগিসহ হাতে থাকা বাঁশ দিয়ে তাকে আঘাত করায় তিনি পানিতে ডুবে মারা যান।
নিহত দুলাল আহমদের ছোট ভাই সেলিম উদ্দিন বলেন, ভাই ভালো সাঁতার জানতেন। তিনি পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাকে মারা হয়েছে। ভাইয়ের মরদেহের বামপাশের কানের কাছে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশকে দুলাল আহমদের পিছু নিতে দেখা স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন, আমি পুলিশের দুই স্যারকে বলেছি আসামি ভয়ে পালিয়ে গেছে। আপনারা ওই দিকে আর যাবেন না। ওইখানে পানি ও কাদা আছে। তারা আমার বাড়ি পাশ থেকে বড়বড় বাঁশ হাতে নিয়ে জুতা খুলে পিছু নেন। তাদের একজনের নাম এসআই জসিম বলে আমি শুনেছি।
রোববার দুপুরে বিয়ানীবাজার থানাপুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আফতাব উজ জামান রিগান। পরে মরদেহটি বিকেলে ময়নাতদন্তের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সোমবার দুলালের মরদেহের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবারের অভিযানে নেতৃত্বদানকারী বিয়ানীবাজার থানার এসআই জসিম উদ্দিনের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া তিলপাড়া ইউনিয়ন বিট পুলিশ কর্মকর্তা হলেও হাওরের মরদেহ উদ্ধারের সময় এসআই জসিমকে দেখেননি স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, নিহত দুলালের বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। তাই শনিবার তাকে ধরতে পিরেরচক এলাকায় যায় পুলিশ। এসময় দুলালের পাশে আরেকজন লোক ছিল। তখন ভুল লোককে ধরে পুলিশ। এসময় মূল আসামি যে ছিল সে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। তার পেছনে পেছনে পুলিশও দৌড়ায়। দৌড়ানোর এক পর্যায়ে সে পানিতে ঝাঁপ দেয়।
তিনি বলেন, পুলিশের ধারণা হলো আসামি পানিতে ডুব দিয়ে উঠে অন্যদিকে পালিয়ে গেছে। এটা ভেবে ওরা চলে আসছে। অতটা খেয়াল করেনি। আজকে (রোববার) তার মরদেহ পাওয়া গেছে। মরদেহ পাওয়া গেলে তো স্বাভাবিক কারণে এটা একটা আবেগের বিষয়। তাই অনেকে অনেক কথা হয়তো বলতে পারে।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা নিজেরা পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে বিষয়টি হজম করছি। কিন্তু আমি ওখানের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সুরতহাল রিপোর্ট যথাযথভাবে করেছি আমরা এবং মেডিকেলে পাঠিয়েছি ময়নাতদন্তের জন্য। কিভাবে তিনি মারা গেছেন তা জানার জন্য। মেডিকেল রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ যেভাবে আসবে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেবো।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সম্পর্কে যে কথা-বার্তা উঠেছে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না তা আমরা তদন্ত করে দেখবো। যদি কারও দায়িত্বে অবহেলা পাই, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
পানিতে ফেলে বাঁশ দিয়ে পিঠিয়ে দুলালকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, দুলাল পুলিশের কোনো মামলার আসামি ছিলেন না। তিনি একটা টাকা-পয়সা লেনদেনের নরমাল মামলার পলাতক আসামি ছিলেন। পুলিশ পানিতে পড়ার পরও এভাবে বাঁশ দিয়ে মারার কথা না। রিমান্ডের আসামিকেও আমরা এভাবে বাঁশ দিয়ে পেটাই না।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে অভিযানে গেলে আসামি পালিয়ে যেতে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিল। রোববার খবর পেয়ে হাওর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে নাক দিয়ে একটু রক্ত বের হয়েছে। ওটা হার্ট অ্যাট্যাক হলেও নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব বলেন, নিহত দুলাল আহমদকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে উত্তেজিত ছিলেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে আশ্বস্ত করেছি।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলে সিলেটের পুলিশ সুপার পরিদর্শনে আসবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
সূত্র : জাগো নিউজ