বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদকে সামনে রেখে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। ফেসবুকে পেইজ খুলে মাত্র ৪৭ হাজার টাকায় এক ভরি স্বর্ণ বিক্রির বাহারি বিজ্ঞাপন, অর্ডার নিশ্চিত হলে ভুয়া ডেলিভারি স্লিপ পাঠিয়ে অর্ধেক মূল্য হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া। এভাবেই কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষের কাছ থেকে।
সিলেটে এক নারী চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার মূল হোতা এক তরুণীসহ এই প্রতারক চক্রের ৫ জনকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করেছে র্যাব-৯।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আয়েশা সিদ্দিকা (২০), তার স্বামী আব্দুল আল মোমেন ওরফে বাক্কার (২৬), মো. ওসমান গনি সরোয়ার (২৩), মো. বাবর আলী শেখ (২৫) এবং মো. মেহেদী হাসান (১৭)। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন এবং ৭টি সিম উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৯ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. মোমিনুল হক জানান, ৪ অভিযোগকারীর অভিযোগ এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ বিক্রির ভুয়া অনলাইন পেইজ ‘চারু নিকেতন’ ব্যবহার করে প্রতারক চক্রের বিশাল প্রতারণা কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। আয়েশা সিদ্দিকা হচ্ছেন এই পেইজের এডমিন এবং বাকি আসামিরা সহযোগী। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
তিনি বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা মূলত অন্য একটি অনলাইন পেইজের মাধ্যমে কাপড় বিক্রি করতেন। ছয় মাস আগে তিনি প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে চারু নিকেতন নামক স্বর্ণ বিক্রির পেইজ খুলেন। তার এই পেইজের বর্তমান ফলোয়ার্সের সংখ্যা সাত হাজারের অধিক। কম দামে এবং কিস্তিতে আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্বর্ণের গহনার পোস্ট দিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। ক্রেতারা পেইজে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে চাইলে বলা হতো গহনা কিনতে হলে অ্যাডভানস হিসেবে অর্ধেক মূল্য বিকাশ করতে হবে। বিকাশ করা সম্পন্ন হলেই এই প্রতারকরা নিতো আরেক প্রতারণার আশ্রয়। ভুয়া কুরিয়ার স্লিপের ছবি পাঠানো হতো ক্রেতাদের মেসেঞ্জারে। এরপর ও যখন দেরি হতো তখন এই প্রতারক চক্র আরও টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য টালবাহানা করত। অবশেষে ভুক্তভোগী ক্রেতাকে ম্যাসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে ব্লক করে দিত এই প্রতারক চক্র।
মো. মোমিনুল হক জানান, সরল বিশ্বাসে এবং লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া এ পর্যন্ত ২৫০ থেকে ৩০০ ব্যক্তির নিকট থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।
তিনি আরও জানান, ‘চারু নিকেতন’ নামক একটি জুয়েলারি শপ এর প্রকৃত অবস্থান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানা এলাকায়। এই জুয়েলারি শপ এর মালিকের সঙ্গেও কথা বলেছে র্যাব। অনলাইনে স্বর্ণ বিক্রির কোনো ফেসবুক পেজ চালান না এবং প্রতারিত হওয়া অনেক ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন।
এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ডা. নিষ্ঠা চক্রবর্তী কর্তৃক দায়েরকৃত এসএমপির জালালাবাদ থানার মামলায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৯ এর অভিযান অব্যাহত আছে।
র্যাব-৯ এর কার্যালয়ে অভিযোগকারী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. নিষ্ঠা চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি এক ভরি স্বর্ণ অর্ডার করেছিলেন। আয়েশা সিদ্দিকা তাকে ডেলিভারির জন্য কুরিয়ারে পাঠানো হয়েছে এমন একটি স্লিপ তার ফেইসবুক মেসেঞ্জারে পাঠান। তার পর অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। তিনি ২৫ হাজার টাকা বিকাশে পাঠানোর পর থেকেই তাকে ফেসবুক পেইজ থেকে ব্লক করে দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি। অবশেষে সিলেটের জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পাশাপাশি র্যাবের কাছে অভিযোগ দেন।
তিনি বলেন, শুধু তার ২৫ হাজার টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য নয়; তারা যেন আর কারো সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যেই তিনি র্যাবের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ সময় র্যাব কার্যালয়ে গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের মূল হোতা আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে কথা বললে তিনি এসব অভিযোগ স্বীকার করেন। বলেন, এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক মানুষকে তারা তাদের প্রতারণার জালে ফেলেছেন।
সূত্র : যুগান্তর