বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট নগরের লালদীঘির হকার্স মার্কেটে বাঁ পাশের দোকানে তখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। ডান পাশের দোকানের মালিক আব্দুস সালাম (নীল টিশার্ট পরা) নিজের দোকানের মালামাল বের করে তুলে দেন সাহায্য করতে আসা ব্যক্তিদের হাতে। পরে দেখেন বেশির ভাগ মাল লুট হয়ে গেছে। আজ সোমবার বিকেলে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সে কথাই বলছিলেন সালাম। ছবি : আশকার আমিন রাব্বি
ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় দিন শুরুর পর স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরার চেষ্টায় সিলেটের লালদীঘির হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের একাংশে দোকানপাট খোলা হয়েছে। ক্রেতারাও আসা-যাওয়া করছেন।
তবে বিশাল মার্কেটের উত্তর-পূর্ব দিকে যেখানে আগুন লেগেছিল, সেখানকার পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেকটা অন্ধকার আর থমথমে পরিবেশ। বিদ্যুৎ না থাকায় তা আরো গাঢ় হয়ে যেন ধরা দিচ্ছে চোখে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগুনের নিষ্ঠুর তাণ্ডবের মধ্যেই সাহায্যের নাম করে কৌশলে তাদের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যার অর্থ মূল্য অর্ধ কোটি টাকার বেশি। সংকটের মুহূর্তে এমন অমানবিক প্রতারণায় হতবাক। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তা।
আজ সোমবার বিকেল ৫টায় সিলেট নগরের লালদীঘির হকার্স মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটে আগুন লাগার পর কাছাকাছি যেসব দোকানে তখনও আগুন লাগেনি সেসব দোকান মালিকরা তাদের মালামাল নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অনেকে। অসহায় অবস্থায় পড়া ব্যবসায়ীরা বিশ্বাস করে তাদের হাতে তুলে দেন মালামালের বস্তাগুলো। অনেকে সাহায্য করলেও কেউ কেউ সেগুলো নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখার নামে মালামাল নিয়ে কেটে পড়েন। এভাবে লুট হয়ে যাওয়া মালামালের মূল্য অর্ধ কোটি টাকার ওপরে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
সেসব ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা তাঁরা দিয়েছেন কালের কণ্ঠের কাছে। হকার্স মার্কেটের তিন নম্বর গলির ব্যবসায়ী জুনেদ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘সেহরির আগে দোকান বন্ধ করে ফিরছিলাম। বাসার গেইটের কাছে পৌঁছেছি, এমন সময় মার্কেটের এক প্রহরী ফোন দিয়ে জানান, আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমার ঠিক পাশের দোকানের দেয়াল ও টিন আগুনে পুড়ছিল। এ অবস্থায় মাথা ঠিকমতো কাজ করছিল না। তখন মালামাল রক্ষায় তাড়াহুড়ো করে শার্টার খুলে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। অনেকে তখন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। পরে দেখি আমার দোকানের প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল খোয়া গেছে। দুর্বৃত্তরা তাড়াহুড়ার সুযোগে লুট করে নিয়ে গেছে।’
এ রকম লুটপাটের শিকার অনেকে হলেও অন্তত পাঁচজন ব্যবসায়ী বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জুনেদ আহমদ জানান।
আব্দুস সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সালাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘মার্কেটে আগুন বাড়ছিল। সবাই এসে তাড়া দিচ্ছিলেন মালামাল বের করার জন্য। আমি তখন অনেকটা দিশাহারা। তাদের কথায় দোকান খুলে মাল বের করে দিচ্ছিলাম। আর সাহায্য করতে এগিয়ে আসা পরিচিত-অপরিচিত অনেকে সেগুলো আগুন থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখছিলেন। পরে সরানোর কাজ শেষ হলে দেখি ৭০-৮০ লাখ টাকার মালামালের মধ্যে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার মালামাল গায়েব।’
আব্দুস সালামের সব মালামালই থ্রি পিছ ছিল। ঈদের জন্য আরো বেশি পরিমাণে মালামাল এনে গুদামজাত করেছিলেন। গত শনিবারও পাঁচ লাখ টাকার মাল এসেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পনের রমজানের পর গার্মেন্টসগুলো থেকে মালামাল সাপ্লাই দেয় না। সে কারণে শেষ পনের রমজানের জন্য বাড়তি মালামাল এনে রেখেছিলাম। এখান থেকে আমি পুরো সিলেট বিভাগে পাইকারি বিক্রি করি। কাপড় ব্যবসায়ীরা সবাই আমাকে চেনেন।’ আগুন ক্ষতি করতে না পারলেও দুর্বৃত্তদের লুটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তিনি।
লুটপাটের প্রত্যক্ষদর্শী হকার্স মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী শুকরিয়া থ্রি পিস-এর স্বত্বাধিকারী রমহতুল্লাহ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাসা মার্কেটের পাশেই। সাহরির সময় গেছি। ৩টা ১০ বাজে, তরকারি গরম বসিয়েছি। এমন সময় মানুষের চিৎকার শুনতে পাই-আগুন আগুন। কিসের আগুন বুঝতে না পেরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি মার্কেটে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসি। ফায়ার সার্ভিস আসে। তারা চেষ্টা করলেও পানি দিয়ে কাভার করতে পারছিলেন না। এসময় অনেকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু তাদের ভিড়ে সুযোগসন্ধানী অসৎ লোকও ছিল। ৫ নম্বর গলির আশেপাশের দোকানগুলোর অনেকেই কমবেশি তাদের লুটের শিকার হয়েছেন। তবে পাঁচ-ছয়জন ব্যবসায়ী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মানে মানুষের দুঃসময়ের সুযোগে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ মালামাল লুট হয়ে গেছে। লুটেরা গাড়ি ভরেও মালামাল নিয়ে গেছে।’
নিজে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বিমূঢ় রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমার বাড়ি নরসিংদী। ঈদে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। এখন এরকম ঘটনার পর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। বুঝতে পারছি না কী করব।’
এ বিষয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এরকম কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
সূত্র : কালের কন্ঠ।