বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানার মইয়ারচর এলাকায় কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে এক তরুণকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার তরুণের পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেওয়া হলে পুলিশ ওই তরুণকে উদ্ধার করলেও এ ঘটনায় কোন মামলা না নিয়ে উল্টো তাকেই আটক করেছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
নির্যাতনের শিকার তরুণের নাম আলী আমজাদ ওরফে মারুফ (১৮)। সে মইয়ারচর পশ্চিমপাড়া এলাকার শফিকুর রহমানের পুত্র। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার মারুফের বাবা শফিকুর রহমান।
এ সময় ওই তরুণের বোন ফারজানা আক্তারের হাতেও ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। পরে তিনি সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে গেলে দেখা যায় ফারজানা আক্তারের বাম হাতে ব্যান্ডেজ করা। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন প্রতিবেশী মকবুল আলীর ছেলে সামাদ তার হাতে ছুরিকাঘাত করেন।
নির্যাতনের শিকার মারুফের বাবা নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও প্রদান করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায় গুরুতর আহত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে থাকা মারুফের মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। আর তাকে ঘিরে রেখেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। কয়েকজ 'মরে গেলে বিপদ হবে' বলেও উল্লেখ করছেন।
মারুফের বাবা অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে তার ছেলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। প্রথমে সড়কে ফেলে নির্যাতনের পর বাড়িতে নিয়ে বেঁধে রাখেন প্রতিবেশী সামাদ, সাদ্দাম ও তার ভাই মনসুর, মুসতাকিমসহ কয়েকজন। এ ঘটনায় প্রথমে তার মেয়ে তামিমা আক্তার সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানায় গিয়ে ঘটনার সংবাদ দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ গিয়ে মারুফকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সাথে তার বোন মারুফাকেও থানায় আনা হয়।
তিনি বলেন, বিকালে তার ছেলে মারুফকে থানায় আনা হলেও রাত চিকিৎসার জন্য সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসে ভর্তি না করে ফের থানায় নিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়। হাসপাতালের ফটকে মারুফকে আহত অবস্থায় দেখে তিনি এগিয়ে আসলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, আমি রাজমিস্ত্রী কাজ করি। ২২ হাজার আমার ছেলেকে দিয়ে বাড়ি পাঠানোর সময় পথে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে তার সঙ্গে থাকা টাকাও ছিনয়ে নেয় তারা। এদিকে ছুরিকাঘাতে আহত মারুফের বোন ফারজানা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ভাইকে উদ্ধার করে পুলিশ থানায় নিয়ে আসার পর তিনি একা বাড়ি থেকে বের হলে সামাদ নামের ওই যুবক তার হাতেও ছুরিকাঘাত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'কোন কারণ ছাড়াই সামাদ, সাদ্দামসহ কয়েকজন মারুফের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা বারণ করলেও তারা শুনেনি। প্রথমে তাকে সড়কে ফেলে নির্যাতন করে পরে তাকে ধরে নিতে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করে তারা।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান গণমাধ্যমকে বলেন, ' ৯৯৯-এ কল পয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে নাম পরিচয় জানার পর দেখা গেছে তার নামে একটি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে। তাই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।' তবে কে বা কারা নির্যাতন করেছে এটি জানা যায়নি জানিয়ে ওসি আরও বলেন, লোকজনের ভিড় ছিলো। তাই কারা তাকে মারধর করেছে সেটি শনাক্ত করা যায়নি। নির্যাতনের ব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
তবে মারুফের বাবা শফিকুর রহমানের অভিযোগ, জায়গা জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে এই হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২৪ জুলাই আমার ঘরে ভাংচুর করে অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় প্রথমে সালিশ বিচার হলেও কোন সমাধা না হওয়ায় পরে ২৮ জুলাই কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মারুফের মা। এর পর অভিযুক্ত সামাদ বাদী হয়ে আহত মারুফ, তার ভাই আরিফ ও তার বাবা শফিকুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন থেকে তাদেরকে নানা ভাবে নির্যাতন করলেও অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।