বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেছেন সময়ের আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি। বালাগঞ্জের কয়েকজনসহ সিলেট, হবিগঞ্জ ও বি-বাড়িয়ার ১৫ জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
সাইবার ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক মো. আবুল কাশেম মামলাটি গ্রহণ করেছেন। আগামী ৩১ মার্চ এ মামলার আদেশের দিন ধার্য্য করেছেন তিনি। বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ উদ্দিন।
মামলার আসামিরা হলেন- সিলেটের বালাগঞ্জ পৈলনপুরের মইনুল ইসলাম, হাফিজ মুজিবুর রহমান, মসজিদের ইমাম ও খতিব ক্বারী জয়নাল আবেদীন,সিলেট অনলাইন টিভি নবীগঞ্জের রাজু আহমদ, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নবীগঞ্জ সদরঘাটের শেখ শাহজাহান, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী হবিগঞ্জ লাখাই মুড়াকুড়ির আব্দুল কুদ্দুছ নুরী, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী তপু তরফদার, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নিজাম আহমেদ আকরাম, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নিজাম উদ্দিন সিদ্দীকি, একে মিডিয়া সিলেট, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নবীগঞ্জের দেওপাড়া সাতাইল গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে হাফিজ কামরুল ইসলাম জালালি, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারি বি-বাড়িয়া জেলার আখাউড়া তুলাই শিমুল গ্রামের শেখ রাসেল, ফেইসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী বি-বাড়িয়া চারগাছ গ্রামের আবদুল ফরহার ছেলে মোরশেদ শাহ, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার গুমগুমিয়া গ্রামের খালেদ আহমদের ছেলে এস.এ শামিম ও টিটিভি।
গিয়াস উদ্দিন বি-বাড়িয়া জেলার বি-বাড়িয়া সদর থানার চাপুইর গ্রামের মো. নাজিব উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তাঁর দায়েরকৃত মামলায় ৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়াস উদ্দিন তাহেরি নিজের প্রাইভেটকারযোগে সিলেট আদালতে উপস্থিত হন। পরে ১২টার দিকে আইনজীবী মো. জাবের হোসাইনের মাধ্যমে মামলা দাখিল করেন তিনি। মামলায় তাহেরির পক্ষের প্রধান আইনজীবী হলেন এটিএম ফয়েজ উদ্দিন। তাঁর সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আইনজীবী মো. সাইফুর রহমান ও আইনজীবী মো. জাবের হোসাইন।
তাহেরি তার মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিভিন্ন ফেইসবুক, ইউটিউব ও ওয়েব সাইটে প্রচার করায় দেশসহ বিশ্বব্যাপী তার সম্মান নষ্ট হচ্ছে। যার জন্য সমাজে চলাফেরা ও মুখ দেখানো লজ্জাকর হয়ে পড়েছে।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মইনুল ইসলামের সহযোগিতায় হাফিজ মুজিবুর রহমান, ক্বারি জয়নাল আবেদীন মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সুন্নী সম্মেলনে মাওলানা তাহেরিকে দাওয়াত না করে, মানসম্মান ও খ্যাতি নষ্টের জন্য অনুমতি ব্যতিত পোস্টার প্রকাশ করে এবং ইসলামী সম্মেলনে ভিডিও করে জুতা মিছিল করে বিভিন্ন ফেইসবুক, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভাইরাল করা হয়। তখন হাফিজ মুজিবুর রহমান মানুষের সামনে তাহেরিকে জুতাপেটার কথা বলে আলেম সমাজের খ্যাতি নষ্ট করার কথা বলেন এবং এসব দ্রুত বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, তাহেরিকে ইসলামি সম্মেলনে উপস্থিত করানোর কথা বলে গ্রামবাসীকে বিশ্বাস করানোর জন্য পৈলনপুর মসজিদের ইমাম ও নুরী মিলে দুইটি বিকাশ নাম্বারে ত্রিশ হাজার ছয়শত টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সেন্ড করেন। যা তাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং একজন বক্তার মান-সম্মান নষ্ট করে তাকে দেশ, জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছে লজ্জিত করে।
এছাড়াও “জুতা মিছিল তাহেরির বিরুদ্ধে ‘৩৩ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে বালাগঞ্জ এক মাহফিলে মূর্খ বাউল বক্তা, তাহেরি না আসায় সিলেটে অবাঞ্চিত ঘোষণা’-সহ নানা ধরণের শিরোনাম দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এতে তাহেরি ও তার পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে । যা কোনো অর্থমূল্য দিয়ে মূল্যায়ন বা পূরণ করা অসম্ভব।
আদালতের কাছে ন্যায় বিচারের স্বার্থে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন তাহেরি।
এদিকে, মামলা দায়েরের পর আদালত প্রাঙ্গণে গিয়াস উদ্দিন তাহেরি সাংবাদিকদের জানান, তিনি বালাগঞ্জের মাহফিলের কোনো দাওয়াত পাননি। জানেন না, কে বা কারা তার নাম করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু তার নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে তাই তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিভিন্ন ফেসবুক লাইভে তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে এবং তার নামে টাকা নেওয়ার অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাই আদালতে মামলা দাখিল করেন। আদালত তার মামলাটি আমলে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকা নিয়ে সিলেটের বালাগঞ্জে একটি ওয়াজ মাহফিলে আসেননি- এমন অভিযোগ ওঠে গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ)। এদিন বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে এ মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয়রা।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়- ওয়াজ মাহফিলটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরিকে। বিকেলের দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর ওয়াজ করার কথা ছিলো। মাহফিলে আসা বাবদ তার পিএএস-এর কাছে দুই ধাপে অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাহেরির পিএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলে কেউ রিসিভ করেননি। ওয়াজের নির্ধারিত সময় পর্যন্তও কেউ কল রিসিভ করেননি, এমনকি কল ব্যাকও করেননি।
এক পর্যায়ে টাকা নিয়ে তাহেরির না আসার অভিযোগটি আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মাহফিলের মাইকে জানিয়ে ওয়াজ শুনতে আসা মুসল্লিদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এসময় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাহেরির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং জুতা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এছাড়াও এসময় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে তাহেরিকে পুরো সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এমন কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
পরবর্তীতে বিষয়টি তাহেরির নজরে আসলে তিনি এ অভিযোগের বিষয়টি সস্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন। ওইদিনই তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন।
পোস্টে তাহেরি লেখেন-
‘আজকে দিনের বেলা একটি ফেসবুক লাইভ ও ইসলামী সুন্নী মহা সম্মেলনের একটি পোস্টার আমার নজরে এসেছে, উক্ত লাইভে আমাকে নানা ভাবে দোষারোপ করে কথা বার্তা বলা হয়েছে। পোস্ট গুলোতে মানহানীকর কথা বলা হয়েছে। যা কখনও কাম্য নয়,আমি দৃঢ় চিত্তে বলতে চাই, আমাকে দাওয়াত না দিয়ে মাহফিল কমিটি প্রতারণামুলক ভাবে আমার নাম পোস্টারে ব্যবহার করেছে। প্রতারণা মুলক ভাবে পোস্টারে আমার নাম ব্যবহার করে লক্ষ মানুষের কাছে আমাকে অপমান করেছে। আবার ফেসবুক আইডিতে লাইভ করে মানহানিকর কথা বলছে। আমি কখনো দাওয়াত রাখলে মিস করি না,ঐ মাহফিলের কমিটির লোকজন কে চ্যালেঞ্জ করছি তারা কোন প্রমান দিতে পারবেনা আমি কখনও দাওয়াত নিয়েছি। যদি কোন প্রতারক আমার নাম ব্যবহার করে কোন প্রতারণা করে সেটার জন্য আমি দায়ী নয়, সংশ্লিষ্টরা দায়ী।আমার সাথে কখনও মাহফিল কমিটি যোগাযোগ করে নাই, আজকে বিকাল সাড়ে ৫ টায় সাংবাদিক আজাদ ভাই এর মাধ্যমে এ যোগাযোগ হলে এই প্রতারণা খবর জানতে পারি,কে বা কারা আমার নামে প্রোগ্রাম দিয়ে ৩৩ হাজার টাকা নিয়েছে। তাই উক্ত মাহফিল কমিটি প্রতারণা কারী ও ফেসবুক লাইভের বিরুদ্ধে আগামীকাল সাইবার আইনে ব্যবস্থা গ্রহন করছি।সব মুনাফেক শয়তানের মুখোশ উন্মোচন হবে। ইনশাআল্লাহ
ঘটনা স্থলঃ পৈলনপুর বালাগঞ্জ সিলেট’
সূত্র : সিলেট ভিউ