বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : ‘সংকট’ দেখিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সিলেটে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম। সিলিন্ডার প্রতি একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি দামে পাইকারিভাবেই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এ নিয়ে সিলিন্ডারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাজার থেকে সিলেটের ডিস্ট্রিবিউটররা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ এখনো সিলেটের বাজারে এলপিজির বোতলজাত গ্যাসের সংকট দেখা দেয়নি বলে দাবি করেন তারা। তবে সিলিন্ডার গ্যাসের সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিস্ট্রিবিউটররা। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তারা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে সিলেটেও রয়েছে বোতলজাত এলপিজি গ্যাসের চাহিদা। সিলেটে ঠিক কী পরিমাণ বোতলজাত গ্যাসের চাহিদা রয়েছে সেটি নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।
ডিস্ট্রিবিউটররা জানিয়েছেন- প্রতিদিন এই চাহিদা ৫ থেকে ৮ হাজারের মধ্যে হবে। সিলেটে এলপিজি গ্যাসের খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, গত দুইদিন থেকে অর্থাৎ শনিবার থেকে সিলেটে বোতলজাত গ্যাসের সংকট দেখানো হচ্ছে। সিলেটে দুটি বড় ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে কামাল এন্টারপ্রাইজ ও বেস্ট হোম ডেলিভারি বা ভিএইচডি। এ দু’টি পাইকারি ডিস্ট্রিবিউটর থেকে গ্যাস কেনেন খুচরা দোকানিরা। এরপর এগুলো গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানানো হয়। এরপর থেকে প্রতিটি বোতল থেকে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার এক দোকানি জানিয়েছেন, তারা চাহিদামতো গ্যাস সিলিন্ডার কিনে এনে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করে থাকেন। সিলেটে যে দু’টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সে দু’টিতে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এরপরও গ্যাস সংকটের কারণ দেখিয়ে তারা এলপিজি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। আবার যারা বেশি দাম দিচ্ছেন তারা চাহিদার অর্ধেক সিলিন্ডার পাচ্ছেন। ফলে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেটে ছোট বোতলজাত এলপিজি গ্যাস পাইকারি হারে তারা কিনে আনেন ১১৩০ টাকা করে। কিন্তু এখন ১৩০০ টাকার উপরে তারা কিনতে হচ্ছে। আর বড় সিলিন্ডার আগে কেনা হতো ৩১৫০ টাকা হারে। এখন সেটিও ৩৩০০ টাকা হারে কিনতে হচ্ছে। গ্রাহক পর্যায়ে আরেকটু বেশি দামে খুচরা বিক্রি করতে হচ্ছে।
বন্দরবাজার এলাকার এক দোকানি জানান, সরকার দাম বাড়ালে ঘোষণা দিয়ে বাড়াবে। যুদ্ধের কারণে হয়তো সে ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু তার আগেই ডিস্ট্রিবিউটররা বোতলজাত গ্যাসের সংকট দেখিয়ে বিক্রি বন্ধ রাখছে। যখন দাম বাড়বে তখন তারা বেশি লাভে ওই বোতল বা সিলিন্ডারগুলো বিক্রি করবে। এ কারণে তারা এখন কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছে বলে দাবি করেন ওই ব্যবসায়ী।
এদিকে, সিলেটের সিলিন্ডার বিক্রির অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান কামাল এন্টারপ্রাইজের কামাল আহমদ গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, আমরা কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছি না। গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার আসছে না। এ কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকায় যোগাযোগ করে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আসতে। এজন্য গাড়িও পাঠানো হয়েছে। গাড়ি এলে সেই সংকট থাকবে না। তিনি জানান, আমাদের নিজেদের উদ্যোগে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আসার কারণে ভাড়া হিসেবে হয়তো ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যেতে পারে। এই টাকাগুলো নেয়া হচ্ছে। কিন্তু গ্যাসের সিলিন্ডার আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।
একই কথা জানিয়েছেন, বেষ্ট হোম ডেলিভারি-ভিএইচডির মালিক আলী হোসেন। তিনি জানান, ‘দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে ততটা না। আমরাই এখন গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছি না। যুদ্ধের কারণে সেটি হচ্ছে। কোম্পানি না দিলে তো আমরা বিক্রি করতে পারবো না।’
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হলে সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধের কারণে অনেক জায়গা থেকে সমুদ্রপথে গ্যাস আসছে না। এতে করে সংকট রয়েছে। কিন্তু এখনো সেটির প্রভাব পড়ার কথা না। কিন্তু তার আগেই সিন্ডিকেট করে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
সংবাদ : মানবজমিন