Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-03-23T15:37:14Z
সিলেট

সিলেটে জালিয়াতি করে জীবন বীমার ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাৎ

বিজ্ঞাপন

জি ভয়েস ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশনের সিলেট আঞ্চলিক অফিস থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে চক্রটি এই অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় চক্রটির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার জীবন বীমার সিলেটের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিনসহ ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের উপ-পরিচালক মো. নূর-ই-আলম সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, জীবন বীমার সিলেটের আঞ্চলিক অফিস থেকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অনেক অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুদকের তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। অনেকগুলো মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
 
চক্রটির সদস্যদেরকে দুদক গ্রেফতারও করে। প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিতের পর গতকাল মঙ্গলবার আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। তবে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এখনো নিয়োগ করা হয়নি।
 
জানা গেছে, সিলেট আঞ্চলিক অফিসে কর্মরত থেকে উচ্চমান সহকারী ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার ২২টি পলিসির মাধ্যমে ৮৮ হাজার ১০৯ টাকা, ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার ও দেলোয়ার হোসেন মিলে ১টি পলিসির ৩ হাজার ৪৪৫ টাকা, ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার ও জাবেদুল ইসলাম মিলে ১টি পলিসির ৩ হাজার ৬০ টাকা, দেলোয়ার হোসেন ৩টি পলিসির ৪৯ হাজার ৭২ টাকা, ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন ১৩০ পলিসির ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫০১ টাকা, আমিরুল ইসলাম ৮টি পলিসির ৯৯ হাজার ৩৩৮ টাকা ও ফিরোজ আলম মিলে ২টি পলিসির ৮ হাজার ৪৫৪ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও, কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ও ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার মিলে ৫৭০টি পলিসির ১ কোটি ২১ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৯ টাকা, আব্দুল লতিফ চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসেন মিলে ৬১টি পলিসির ৫ লাখ ৮১ হাজার ৫১৪ টাকা, আব্দুল লতিফ চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম মিলে ১টি পলিসির ৬ হাজার ৬০০ টাকা এবং আব্দুল লতিফ চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম ২টি পলিসির ৪৭ হাজার ১৫৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের মানি লন্ডারিং ই/আর নং-৪২/২০২০ এর অভিযোগ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট টিম অনুসন্ধান করে।
 
দুদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এই টাকা আত্মসাতের পুরো কাহিনী ধরা পড়ে। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা নিশ্চিতের পর গতকাল মঙ্গলবার জীবন বীমার সিলেট আঞ্চলিক অফিসের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানার পয়ালী গ্রামের আব্দুর রব মিয়ার পুত্র জীবন বীমার ম্যানেজার মো. গিয়াস উদ্দিন, কুমিল্লা সদরের লালবাগ গ্রামের আলীম উদ্দিন মজুমদারের পুত্র উচ্চমান সহকারী ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির মাহুতলা গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র জুনিয়র অফিসার মো. ফিরোজ আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কুড়িগ্রামের মৃত নুরুল হকের পুত্র নিম্নমান সহকারী মো. দেলোয়ার হোসেন, সুনামগঞ্জের ছাতকের কাইতকোনা গ্রামের হারিছ আলীর পুত্র উচ্চমান সহকারী আমিরুল ইসলাম ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ছোটধুশিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র নিম্নমান সহকারী মো. নুরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, আসামীরা জীবন বীমা কর্পোরেশনে কর্মরত থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ১২ টাকা আত্মসাৎ করেন। তদন্তকালে আত্মসাতের সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়।

এদিকে, ভুয়া লোককে বীমা গ্রহীতা সাজিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ব্যাংক হিসাব খুলে প্রকৃত বীমা গ্রহীতাদের জমানো ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আত্মসাৎ করেন।

একসময় এই অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি বেরিয়ে এলে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় ২০১৪ সালে জীবন বীমা কর্পোরেশনের সিলেট অঞ্চলের ৩৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ২৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। ওই মামলাগুলোর আসামিরা হলেন, বীমা পলিসি কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ চৌধুরী, ফিরোজ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন, ওয়াহিদুর রহমান, আমিরুল ইসলাম, মো. গিয়াসউদ্দিন, রবিউল ইসলাম, মো. নুরুল ইসলাম, মো. আনিসুজ্জামান খান রশিদ, শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি, মো. আবদুল হালিম মোল্লা, জামিল আহমেদ, শাহিন আহমেদ, গোলাম শরিফুল ইসলাম চৌধুরী, মো. শোয়েব আহমদ, আবদুল কাদের, ফয়সুরুল গনি, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, মো. আবুল ফাত্তাহ ফজলু, একে শায়েখ খান, ইয়াসিন আলী ও রহিমা বেগম বানু। 

২০১৭ সালে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বর্তমানে আদালতে মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ বীমা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ চৌধুরীকে নগরীর আম্বরখানার শামস সুপার মার্কেটস্থ জীবন বীমা কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিস থেকে গ্রেফতার করে দুদক। 

২০০২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আব্দুল লতিফ চৌধুরীসহ জীবন বীমার ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ৫ হাজার ৮৫৮টি প্রিমিয়াম জালিয়াতি করে ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৩০২ টাকা আত্মসাৎ করেন। 

এছাড়াও আঞ্চলিক অফিসের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে সাবেক নিম্নমান সহকারী দিলোয়ার হোসেন, উচ্চমান সহকারী ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার ও জুনিয়র অফিসার ফিরোজ আলম মিলে ১ কোটি ৯০ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৬ সালের শুরুতে আত্মসাতের এ ঘটনাটি ধরা পড়ে। 

এ ঘটনায় জীবন বীমার আঞ্চলিক অফিসের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১১ জুলাই কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর -১০। মামলা দায়েরের পর ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাগবাড়ী থেকে গিয়াস উদ্দিনসহ ৪ জন দুদকের হাতে গ্রেফতার হন। এদিকে, বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা আব্দুল লতিফ চৌধুরী মারা গেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ