বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক : মো. শামিম মিয়া। কখনো ঘটক, কখনো ব্যবসায়ী (জায়গা জমি বিক্রেতা) আবার কখনো সরকারি দপ্তরের কর্মচারী। তিনি এমন পরিচয়ই দিতেন লোকজনের কাছে। আর এরকম ভুয়া পরিচয়ের আড়ালে তিন মানুষের সাথে ফাঁদ পাততেন প্রতারণার। প্রতারণার ফাঁদ পাততে সিদ্ধহস্ত শামিমের প্রথম টার্গেট গ্রামের সহজ সরল মানুষ ও প্রবাসী পরিবার।
এরপর তাদের বিশ্বাস অর্জন করে কৌশলে প্রতারণা ও হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করাই মূলত তার পেশা।টার্গেট করে কন্যাদায়গ্রস্ত অভিভাবককে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ের প্রলোভন, বিয়ের সনদ জালিয়াতি করে ব্ল্যাকমেইল, জায়গা বিক্রির নামে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। কিন্তু ভয়ে তার প্রতারণার শিকার লোকজন মুখ খুলেননি এতদিন।
তবে সম্প্রতি এই পরিস্থিতি পাল্টেছে। এক ব্যক্তিকে পথরোধ করে মারধর ও টাকা লুটের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। এরপর বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার সকল অপকর্মের কাহিনী।অভিযুক্ত মো. শামিম মিয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁওয়ের ভবানীপুর গ্রামের মৃত চিনু মিয়ার ছেলে।
ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে জালিয়াতি করে জোরপূর্বক উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের তারেক মিয়া নামে বিবাহিত যুবককে ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরি করে এক নারীর পরিচয় দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে। এরপর তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন শামিম। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ করেন ওই যুবক। প্রায় এক বছর আগে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাসিন্দা দরিদ্র রজব আলীকে তার মেয়ের জন্য যুক্তরাজ্যের পাত্রের প্রলোভন দেখায় শামিম। এজন্য রজব আলীর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন শামিম। দাবিকৃত টাকার মধ্যে ৭৫ হাজার টাকা কয়েক ধাপে আদায় করেন। পরবর্তীতে টাকা নিয়ে সে সটকে পড়েন।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ বৈঠক হলেও শামিম ওই ব্যক্তির টাকা ফেরত দেননি। এরপর বিভিন্ন সময় টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ধরনা দিলেও টাকা পাননি। অবশেষে মারা যান রজব আলী। রাউৎগাঁওয়ের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত দানু মিয়ার মেয়ে বেলা বেগমের চাচা শ্বশুরের ছেলে শেখ বদরুল হোসেন ও উনার ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করে কয়েক মাস আগে জমি বিক্রয়ের নামে ৯২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন শামিম। বেলা বেগমের শ্বশুরবাড়ি রাজনগরের বকশীপুর এলাকায়। শেখ বদরুল হোসেন ওই এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে গত ১১ মার্চ শুক্রবার রাতে ওই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ ছরফর আলী রাউৎগাঁওয়ের চৌধুরীবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে নগদ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় শামিম বিষয়টি দেখতে পান এবং বাজার থেকে একটু অদূরে সড়কের পাশে সহযোগী নিয়ে ওঁত পেতে থাকেন। অন্ধকারে মোটরসাইকেল আটকিয়ে ছরফর আলীকে মারধর করে জখম করে ত্রিশ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ছরফর আলী শামিমসহ ২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকে শামিম পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শামিম মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করে বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় জানান, ছরফর আলীকে মারধর করে টাকা লুটের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান অভিযুক্ত শামিম এলাকায় বিভিন্ন লোকের সাথে প্রতারণা করে আসছে। সে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সূত্র: সিলেট টুডে