বিজ্ঞাপন
হারিছ আলী : বসতভিটে, ঘরবাড়ী ও ফসলী জমি ছিল কৃষক সাদ উদ্দিনের। সংসার নিয়ে সুখে ছিলেন তিনি। কিন্ত হঠাৎ করে তাদের জীবনে নেমে আসে অমানিষার ঘোর অন্ধকার। কৃষি জমি হারানোর পর একমাত্র বসতভিটে ও ঘরসহ সব তলিয়ে গেছে কুশিয়ারা নদীতে। এমন চিত্র সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরের শেখপুরে।
রোববার বিকেলে তার নসতভিে নদীতে তলিয়ে যাওয়ার পর অবঢ়িষ্ট অংশে দেখা দিয়েছে বিশাল ফাটল। যেকোন সময় এ ভূমিটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় তিনি পরিবার নিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। শুধু সাদ উদ্দিন নয় এমন নির্মম ভাগ্যবরণ করতে হচ্ছ এলাকার লোকজনদের। কখন কার বসতভিটে কিংবা ফসলী জমি নদীতে তলিয়ে যায় এমন আশংকায় প্রতিনিয়ত দিন কাটে তাদের।
জানাযায়, উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকা শরীফগঞ্জ, বুধবারীবাজার, বাদেপাশা ভাদেশ্বর কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে। এসব এলাকায় একের পর এক নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে বসতঘর, কৃষি জমি, দোকানপাঠ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্টান। বর্তমানে এসব এলাকার প্রায় ২০টি গ্রাম রয়েছে নদী ভাঙ্গনের কবলে।
রাক্ষুসী কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের ফলে ভাদেশ্বরের শেখপুর এলাকার বেশ কয়েকটি কৃষক পরিবার বসতভিটে ঘরবাড়ী হারিয়ে বসবাস করছেন এখন অন্যের বাড়ীতে। সর্বশেষ রোববার বিকেলে হঠাৎ করে শা শা শব্দে শেখপুর গ্রামের কৃষক সাদ উদ্দিনের বসত বাড়ীর বড় একটি অংশ কুশিয়ারা নদীতে তলিয়ে গেছে। এসময় বাড়ীর অপরাংশে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। যেকোন সময় এ অংশটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি পরিবার নিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র।
শেখপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও দানশীল আলহাজ নুরুল আম্বিয়া মঙ্গলবার জানান, শুধু সাদ উদ্দিন নয়, শেখপুর গ্রামের অনেক লোকজন ঘরবাড়ী ও বসতভিটে হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। তিনি কয়েকটি অসহায় পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন বলে জানান।
খোজ নিয়ে জানা যায়, নদীর তীরঘেষা শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের খাটকাই-মেহেরপুরের সড়কটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় লোকজন। ইতিমধ্যেই পনাইচক জামে মসজিদ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শবর্তী রাস্তাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ রাস্তাটি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন পনাইরচক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকার শত শত লোক। পনাইরচক স্কুলের নিকটবর্তী রাস্তাটি নদীগর্ভে চলে গেছে। নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পনাইরচক উচ্চ বিদ্যালয়।
এছাড়া খাটকাই-পনাইচক গ্রামের অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন ঘরবাড়ী হারিয়ে। নদী তীরবর্তী ফসলের জমি হারিয়ে কৃষকরা হয়ে পড়েছেন একেবারে নিঃশ্ব। এছাড়া মেহেরপুর বাজার (কালাবাজার), কাদিপুর বাজার, নয়া বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজারের দোকানপাঠ কুশিয়ারা নদীতে ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে।
জানতে চাইলে শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম কবির উদ্দিন জানান, নদীভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে ভাদেশ্বরের শেখপুর গোটারগাও সহ বিভিন্ন এলাকা রয়েছে নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুকির মধ্যে রয়েছে শাহ সাম্পান (র.) মাজার। সরেজমিন ভাদেশ্বরের শেখপুর, গোটারগাও ও মীরগঞ্জ এলাকা পরিমর্ধন করে দেখা গেছে নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহ চিত্র।
ভাদেশ্বরের শেখপুর গ্রামের কৃষক কটাই মিয়া জানান আমার যে পরিমান ভূমি ছিল সব চলে গেছে কুশিয়ারা নদীতে। ’জায়গা জমি ঘরবাড়ী হারিয়ে আমরা এখন বসবাস করছি অন্যের বাড়ীতে’।
তিনি বলেন আমরা এখন কোথায় যাব কিছু বুঝতে পারছিনা। ওই গ্রামের রসন্দ্র বাবু আক্ষেপ করে জানান আমার প্রায় এক কিয়ার (৩০ ডেমিসেল) ভূমির ওপর ঘরবাড়ী ছিল। এখন কিছুই নেই। সব তলিয়ে গেছে কুশিয়ারা নদীর পেটে। এখন আমার বসবাসের একমাত্র সমম্বল একটি ছোট মাটির ঘর রয়েছে। কোন সময় সেটি তলিয়ে যায় এ আতংকে থাকি আমরা। এ কারণে রাতে আমরা ভয়ে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা।
শেখপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা আজিজুর রহমান রানা জানান মসজিদের অনেক ভুমি নদীতে তলিয়ে গেছে। এখন চরম ঝুকির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় গোরস্থান। এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ নুরুল আম্বিয়া জানান, নদীতে ব্লক না থাকার ফলে দিন দিন ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে।
ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আলীম জানান, এ এলাকায় সবচেয়ে ঝুকির মধ্যে রয়েছে শাহ সাম্পান (র.) মাজার, স্থানীয় কয়েকটি গোরস্থান ও রাস্তা। যেকোন সময় ভয়াবহ ভাঙ্গনের ফলে কুশিয়ারা নদীতে এ মাজার ও গোরস্থানগুলো বিলীন হয়ে যেতে পারে।
মীরগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসাযী ও সমাজকর্মী লুৎফুর রহমান জানান নদীতে ব্লক না থাকার ফলে ভাদেশ্বরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ঘরবাড়ী ফসলী জমি নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে নিঃশ্ব হয়ে পড়ছে অসহায় লোকজন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবির সাংবাদিকদের বলেন, নদী ভাঙ্গনের ব্যপারে আমার কাছে আবেদন দিলে আমি উবর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।