বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত রাতে পুলিশি নির্মম নির্যাতনের শিকার হন সিলেটের আখালিয়ার এলাকার যুবক রায়হান আহমদ। ১১ অক্টোবর সকালে তিনি হাসপাতালে মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কাটেনি এর রেশ। মামলা বিচারাধীন। প্রত্যেক শুনানির দিন আদালত প্রাঙ্গনে এসে কাঁদেন রায়হানের মা আর অকালে বিধবা হওয়া স্ত্রী।
রায়হানের পর এবার সুনামগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনে আরেক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠলো।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে উজির মিয়া (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। উজির মিয়া উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের বাঘেরকোনা গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান উজির মিয়া।
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি চোর সন্দেহে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে- থানায় নিয়ে গিয়ে উজিরকে নির্যাতন করে পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সোমবার সকালে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। পরে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
সোমবার দুপুর ২ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলাবাজার এলাকায় মৃত ব্যক্তির মরদেহ নিয়ে বিচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, গত ১০ থেকে ১২দিন আগে একই উপজেলার দরগাপাশা এলাকা থেকে একটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ এই চুরির অভিযোগে পাগলা এলাকার শত্রুমর্দন গ্রামের উজির মিয়াকে ৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে শান্তিগঞ্জ থানার এস আই দেবাশীষ, এস আই প্লাটন কুমার সিংহ আক্তারু জাম্মান তাকে সন্দেহ মূলক আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
থানায় এনে তাকে মারধর করে এবং পরের দিন বুধবার (১০ফেব্রুয়ারি) তাকে সুনামগঞ্জ আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে গুরুতর আহত উজির মিয়াকে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়িতে নিয়ে আসলে আজ সকালে তার অবস্থা অবনতি হলে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় ।
এই ঘটনায় সোমবার দুপুরে উজির মিয়ার লাশ নিয়ে আত্মীয়স্বজন এলাকাবাসীসহ মানববন্ধন করতে আসে। এলাকাবাসীর অভিযোগ- এখানে ইউএনও’র গাড়ি আসলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই ঘটনায় গাড়ির চালক দ্রুত সরে যেতে চাইলে লাশের উপর গাড়ি তুলে দেয়। এতে বিক্ষোব্ধ জনতা আরো ক্ষেপে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। দীর্ঘ বিক্ষোভ অবরোধে সিলেট -সুনামগঞ্জ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিমের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অবরোধ পত্যাহার করে বিক্ষোভকারীরা।
পুলিশি নির্যাতনের ব্যাপারে নিহতের ভাতিজা ইমরান হোসেন বলেন, আমার চাচা উজির মিয়া খুব ভালো নামাজি মানুষ ছিলেন। বিনা অপরাধে পুলিশ ধরে নিয়ে বেধড়ক নির্যাতন করে। পুলিশের অমানবিক নির্যাতনে আমার চাচার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
আনোয়ার নামের নিহতের আরেক স্বজন বলেন, আমরা যখন বিক্ষোভকরী তখন উপজেলা নির্বাহীর গাড়ি দ্রুত বেগে লাশের উপর দিয়ে চলে যায়। এমন নিষ্ঠুরতা আর কখনো দেখিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অপরাধ) আবু সাইদ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এতে পুলিশ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম বলেন, ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক এর দায় তাকেই নিতে হবে। প্রশাসন এর দায় নিবেনা। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
লাশের উপর দিয়ে গাড়ি উঠার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি ভুলবশত হয়ে থাকতে পারে। এমনটা হওয়ার কথা নয়।
সূত্র : সিলেটভিউ২৪ডটকম