বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট :সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা দ্য রাইস’। এই সিনেমাতে উপস্থাপন করা হয়েছে লাল চন্দনের চোরাইয়ের ব্যবসাকে। সিনেমা শুরুতে দেখানো হয়েছে কীভাবে লাল চন্দন ভারত থেকে পাচার করা হয় এবং সেই কাঠ থেকে তৈরি করা হয় জাপানের সবচেয়ে দামী বাদ্যযন্ত্র।
ছবিটির ট্রেইলর প্রকাশের পরেই কৌতুহলি মানুষের নজর গিয়েছে লাল চন্দনের দিকে। নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে এই কাঠকে নিয়ে।
লাল চন্দন একটি বিরল কাঠ যা শুধুমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের চিত্তুর জেলার শেসাচালাম পাহাড়ে বড় হয়। এটি কাঠের একটি অনন্য এবং বিরল রূপ, যা ভারতের গর্ব হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ বিষয় হল লাল চন্দন এর বাজারের চাহিদা 'লাল সোনার' মতোই।
পুজোয় ব্যবহৃত লাল চন্দন অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এটি পুজো ছাড়াও কপালে তিলকের জন্য করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, লাল চন্দন ঘরেও সুখ আনে। এর ব্যবহার জীবনে আনে অপার সুখ।
লাল চন্দনকে রক্ত চন্দনও বলা হয়। উইকিপিডিয়াতে এটিকে রঞ্জনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গাছটিও ভেষজ গুণে বহুবিধ উপকারী। পৃথিবীর অন্য কোনো গাছ এই গাছের মতো নয়। রক্তের মতো লাল হবার কারণে এটাকে ইংরেজিতে Coral-wood বা ‘প্রবাল কাষ্ঠ’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। রক্ত চন্দনের গায়ে, সাদা চন্দনের মতো মোহনীয় ঘ্রাণ নেই কিন্তু তার দেহ বৈশিষ্ট্য সাদা চন্দনের চেয়েও সুন্দর। এই কাঠ কোনো পোকায় খায় না, পানিতে পচে না, কৃত্রিম রঙ লাগানোর দরকার পড়ে না। তাই শত শত বছর অবিকল রঙ ও বর্ণ ঠিক থাকে।
বিউটি পার্লারে চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নারীরা যে প্যাক মাখে, এটার যাত্রা শুরু হয়েছিল রক্ত চন্দনের হাত ধরেই। এই চন্দন শত শত বছর ধরে ধনী ঘরের দুলালীদের মুখমণ্ডল সুন্দর করতে ব্যবহার হয়ে আসছে।
রক্ত চন্দনে রয়েছে বহুবিধ ভেষজ গুন। মূত্র নালীর প্রদাহ, ডায়রিয়া, কাশি ও চামড়ার যাবতীয় সমস্যার কাজে রক্ত চন্দনের ব্যবহার উল্লেখ যোগ্য। তবে এই গাছ হিম সহনশীল নয় বলে, পৃথিবীর সর্বত্র এই গাছ হয় না। এই লাল চন্দন গাছের প্রজাতির বৃদ্ধি খুব ধীর এবং সঠিক পুরুত্ব অর্জন করতে কয়েক দশক সময় লাগে।
লাল চন্দন প্রধানত খোদাই, আসবাবপত্র, খুঁটি এবং বাড়ির জন্য ব্যবহৃত হয়।
ঔষধিগুণ ছাড়াও এই গাছটির ব্যবহারিক মূল্য অনেক। দুনিয়ার বহু সম্পদশালী ব্যক্তি রক্ত চন্দনের কাঠ দিয়ে ফার্নিচার বানিয়ে একটু ঘুমানোর জন্য বহু টাকা ব্যয় করে। দুর্লভ চন্দন কাঠ সংগ্রহে সারা বিশ্বের বিত্তশালীরা সন্ত্রাসীদের পোষে থাকেন।
কাঠের বিশেষ করে অভ্যন্তরীণভাবে, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে এবং আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ চাহিদা রয়েছে। লাল চন্দন প্রধানত খোদাই, আসবাবপত্র, খুঁটি এবং বাড়ির জন্য ব্যবহৃত হয়। বিরল লাল চন্দন তার শাব্দিক বৈশিষ্ট্যের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান এবং বেশিরভাগই বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এক টন কাঠের দাম ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। বিশেষ করে চীন ও জাপানের মতো দেশে লাল চন্দন এবং এই কাঠ থেকে তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি বেশিরভাগই ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। লাল চন্দন থেকে তৈরি হস্তশিল্পের জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা সবসময়ই থাকে।
রক্ত চন্দনের বৈজ্ঞানিক নাম Pterocarpus santalinus। এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ভারতে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশেও এই গাছ কিছু পাওয়া যায়। রক্ত চন্দনগাছ থেকে শক্ত, লাল কাঠ পাওয়া যায়। তবে শ্বেত চন্দনের মতো এ কাঠে সুঘ্রাণ নেই। এ গাছ সাধারণত আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের পাতা বিপরীত, ৩ থেকে ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ফুল হলুদ।