বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রাদুর্ভাব এবং নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সিলেটসহ সারাদেশে সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে।
এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে এবং মাস্ক না পরলে জরিমানা গুনতে হবে। একইসঙ্গে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশও করতে পারবেন না কেউ। গণপরিবহন যাত্রী বহন করবে অর্ধেক আসনে। গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় শাখা থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধের এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সিনিয়র সহকারী সচিব সাইফুল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
যা আছে বিধিনিষেধে—১. দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে না হবে। না পরলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে;
২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;
৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা ভ্যাকসিন সনদ প্রদর্শন করতে হবে;
৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে ভ্যাকসিন সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না;
৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রু-দের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতে আসা ট্রাকের সঙ্গে কেবল চালক থাকতে পারবেন, কোনো সহকারী আসতে পারবেন না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে;
৬. ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের অবশ্যই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সনদধারী হতে হবে;
৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন সনদ প্রদর্শন ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে;
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন;
৯. সর্বসাধারণের করোনার ভ্যাকসিন ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া যাবে;
১০. কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে; এবং
১১. কোনো এলাকায় ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
সরকার এই বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, তাদের সফটওয়্যার আপডেটের পর শনিবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে ট্রেনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। ওই সময় থেকে কেবল ট্রেনের অর্ধেক আসনের বিপরীতেই টিকিট বিক্রি করা হবে। স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির কোনো সুযোগ থাকবে না।
পরে বুধবার (১২ জানুয়ারি) পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ১৫ জানুয়ারি থেকে বর্তমান ভাড়াতেই গণপরিবহন চলবে। তবে বাসগুলো সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটের অর্ধেক যাত্রী বহন করবে। যাত্রী, গাড়িচালক ও সহকারী সবাই অবশ্যই মাস্ক পরে গাড়িতে থাকবেন।
তবে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন না নিলে কবে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবে না, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো বিজ্ঞপ্তি আসেনি।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার কারণেই মূলত এসব বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
দেশে একদিনে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ ডিসেম্বরে একশর ঘরে নেমে এলেও সবশেষ বুধবার তা ২৯শ ছাড়িয়েছে। আবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হারও ১ শতাংশের ঘর থেকে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ঢেউ ছড়িয়ে দেওয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টও দেশে শনাক্ত হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তির শরীরে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই নতুন করে এসব বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এসব বিধিনিষেধ অনুসরণ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লকডাউনের কথাও ভাবতে হতে পারে।