বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকাল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
২৪ জন শিক্ষার্থী এ অনশনে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন ছাত্র এবং ৯ জন ছাত্রী রয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
শাবিপ্রবিতে টানা ছয়দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তাদের দাবি ছিলো একটি হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের। কিন্তু সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত এসে ঠেকে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন।
জানা যায়, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত শনিবার আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন রবিবার সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। এতে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে উত্তুঙ্গে ওঠে আন্দোলন।
এদিকে, গত রবিবার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সিসিক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান। ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান বলে জানান। তাঁরা উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে আন্দোলন থেকে সরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছে এবং আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’