Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-01-19T18:18:39Z
লিড নিউজসিলেট

‘শরীরে ৬০টির বেশি স্প্লিন্টার নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছি, খোঁজ নেয়নি শাবি কর্তৃপক্ষ’

বিজ্ঞাপন

জি ভয়েস ডেস্ক: বুধবার সকাল থেকেই সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম অনুযায়ী বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করায় দুপুর থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে যান।

আন্দোলনের মধ্যেই আমরণ অনশনস্থলে হুইল চেয়ারে করে উপস্থিত হন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডু। শরীরে ৬০টির স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন সজল কুণ্ডু। কাঁদতে কাঁদতে তিনি সেদিনের ভয়াবহতা তুলে ধরেন।

সজল বলেন, ১৬ তারিখ সন্ধ্যার কিছু আগে হঠাৎ করেই পুলিশ স্টুডেন্টদের ওপর চড়াও হন এবং বেধড়ক মারধর করতে শুরু করেন। সেদিন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পেটোয়া বাহিনী শিক্ষার্থীদের মাটিতে ফেলে মারধর করেন। 

তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমিসহ অনেকেই ক্যাফেটেরিয়ায় তালাবদ্ধ ছিলাম। অনেক শিক্ষকও ছিলেন সেখানে। আমরা শিক্ষকদের বলছিলাম যে, স্যার আপনারা বের হয়ে যান। কিন্তু স্যাররা বলছিলেন, আমরা বের হলে যদি তোমাদের ক্ষতি হয়ে যায়। পরে ক্যাফেটেরিয়ার পেছন দিয়ে অর্থাৎ কিচেন দিয়ে স্যারসহ অন্যদের বের করার সিদ্ধান্ত নেই। কয়েকজন বেরও হন। ঠিক তখন তখন বৃষ্টির মতো রাবার বুলেট ছোড়া হলো। অসংখ্য সাউন্ড গ্রেনেড মারা হয়।

সজল কুণ্ডু বলেন, পুলিশের মারধরে আমার এক বন্ধু রাকিবের হাত ভেঙ্গে যায়। সেখানে জুনিয়র ফারদিনসহ আরও কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এরপর আমি তাদের ছাড়িয়ে নিতে যাই।ক্যাফেটেরিয়ার ফেরার সময় একটা সাউন্ড গ্রেনেড আমার হাতে এসে পরে। সে সময় মনে হচ্ছিল শরীরে কয়েকশ ভোল্টের একটা শক লাগলো। একটা রাবার বুলেট আমার বুকে এসে লাগে।

আহত এই শিক্ষার্থী জানান, ডাক্তাররা জানান আমার শরীরে ৬৩টি স্প্লিন্টার রয়েছে। আমার বুকে, হাতে পায়ে পিঠে এখনো এসব স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছি। আমি বলবো ভিসি স্যারের মদদে সেদিন অমানবিকভাবে পুলিশ আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে। পুলিশের আক্রমণের পর যখন আমি উঠে দাঁড়ালাম তখন আমার হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। তখন যারাই ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হয়েছেন তারাই আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আমাদের এক শিক্ষকও সেদিন পুলিশি আক্রমণের শিকার হন। স্যারকে পুলিশের মার থেকে বাঁচাতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর হাত ভেঙ্গে যায়। আমার করুণ অবস্থায় আশেপাশের সবাই এগিয়ে আসেন। এরপর আমাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। 

হাসপাতালে যাওয়ার পথেও মারধর করা হয় উল্লেখ করে সজল বলেন, সবচেয়ে করুণ ব্যাপার হলো, ক্যাফেটেরিয়া থেকে যখন আমাকে কয়েকজন ধরে হাসপাতালের জন্য নিচ্ছিল তখনো তাদের মারধর করা হয়। শেষ পর্যন্ত একজন ডেলিভারি ম্যানের বাইকে করে হাসপাতালে পৌঁছাই। প্রায় ১০ ঘণ্টা আমার কোনো সেন্স ছিল না। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কোনো খোঁজ রাখেনি উল্লেখ করে সজল বলেন, ব্যক্তিগতভাবে অনেক স্যার সহপাঠী আমাদের দেখতে আসেন। ঘটনার সম্ভবত দুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্টেটমেন্ট দেয় যে, আহতদের সব চিকিৎসার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। কিন্তু এটা ডাহা মিথ্যা কথা। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা তো দূরের কথা কেউ আমার খোঁজ নেয়নি।

তিনি বলেন, আমি অসুস্থ অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসে এখানে এসেছি কেবলমাত্র দেশবাসীকে জানাতে যে, আমাদের ওপর কি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহতদের কারো খোঁজ নেয়নি। আমার ডিপার্টমেন্টের স্যাররা ব্যক্তিগতভাবে সবসময় আমার খোঁজ রেখেছেন। এছাড়াও সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আমার খোঁজ নিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার শুরু হওয়া আমরণ অনশন কর্মসূচিতে ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন ছাত্র এবং ৯ জন ছাত্রী রয়েছেন। ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত অনশনকারীরা মুখে কোনো অন্ন নেবেন না বলে জানান।

সূত্র: যুগান্তর


বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ