বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক : গত নভেম্বর মাস রাজধানীবাসীর জন্য কিছুটা অস্বাভাবিক। আগেভাগে শীত নেমে, মাসের শেষে গিয়ে আবার কিছুটা উষ্ণতার পরশ পেয়েছে নগরবাসী। নভেম্বরে স্বাভাবিকভাবে যে বৃষ্টি হয়, এবার এই শহরে তার চেয়ে ৫৬ শতাংশ কম হয়েছে। তবে ডিসেম্বরে এসে যেন বৃষ্টি সব ঘাটতি পূরণ করে দিয়েছে। আজ সোমবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীতে মোট ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা গত ৫০ বছরের ডিসেম্বরে মাসে এক দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড।
গতকাল রোববার রাজধানীতে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, তা ছিল গত ৫০ বছরের মধ্যে ডিসেম্বরে এক দিনের হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। কারণ, আবহাওয়ার বিচারে এই মাসে তেমন বৃষ্টি হয় না, পড়ে হিম হিম শীত। কিন্তু সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি তীব্রতা পায় দুপুর থেকে। বিকেলের মধ্যে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা-বনশ্রী, কারওয়ান বাজার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে পুরান ঢাকার সদরঘাট পর্যন্ত জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমরপানি ভেঙে রাজধানীর অনেক অধিবাসীকে বাসায় ফিরতে হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টির দাপট কমে আসায় প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি কমতে শুরু করে।
ডিসেম্বরের শুরুর এই ঝুম বৃষ্টি অবশ্য নদী-খালবিল থেকে উঠে আসা মেঘের দল থেকে সৃষ্টি হয়নি। বঙ্গোপসাগর সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে তৈরি হওয়া বিশাল মেঘমালা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে। আর ওই মেঘের দল সবচেয়ে বেশি পুঞ্জীভূত হয়েছিল রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায়। যে কারণে দেশের মধ্য এলাকায় বৃষ্টি বেশি ঝরেছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বর মূলত শীতকাল ও শুষ্ক মৌসুম। এই সময়ে মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছাড়া তেমন বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নেই। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ বেশ দুর্বল হয়ে প্রথমে নিম্নচাপে, এরপর লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে সৃষ্টি হওয়া মেঘ ঢাকার আকাশে উড়ে এসে বৃষ্টি হয়ে ঝরেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ বিভাগের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবারের আগে এর কাছাকাছি মাত্রায় বৃষ্টি হয়েছে ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর ৬১ মিলিমিটার। এর আগে ১৯৭৩ সালের ৮ ও ৯ ডিসেম্বর দুই দিনে ৪৪ ও ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তবে ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সেখানে ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা এনসো প্রেডিকশন সেন্টারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর ডিসেম্বর স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে আছে। ফলে সেখানে গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঘন ঘন লঘুচাপ তৈরি হচ্ছে। তবে বছরের এই শেষ সময়ে সাধারণত নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। ফলে ওই ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি ঝরে। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা ব্যতিক্রম।
আগামীকাল ঢাকার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ দিবাগত মধ্যরাত থেকে রাজধানীর আকাশ থেকে মেঘ সরে যেতে পারে। সকাল থেকে রাজধানীর আকাশে রোদের দেখা পাওয়া যেতে পারে। দিনভর রোদ, আর বিকেল থেকে শীতের দাপট বাড়তে পারে।