বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট নগরে পানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মূল্য বৃদ্ধিতে নগরবাসী ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে আন্দোলন দানা বাঁধছে। নগরবাসীর অভিযোগ- কোনো গণশুনানি কিংবা আলোচনা না করে পানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
তবে নগর কর্তারা বলছেন, সিলেটে পানির বকেয়া বেশি পড়ে আছে। পাশাপাশি অবৈধ লাইনেরও ছড়াছড়ি। এতে করে সিলেট সিটি করপোরেশনকে প্রতি মাসে কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ক্ষুব্ধ নগরবাসী জানিয়েছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য নগরে পানির বেশি বিল নেই।
কিন্তু সিলেটে সেটি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২১শে জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের এক মাসিক সভায় পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। ওই সভায় এ নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করা হলেও নগরের নির্বাচিত কাউন্সিলররা সেটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং সবার মতামতের ভিত্তিতে পানির মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি পাস করা হয়। এরপর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ১লা জুলাই থেকে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। তিন মাস অন্তর অন্তর নগরের পানির বিল করা হয়। সম্প্রতি সময়ে অতিরিক্ত বিল দেয়া হলে নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
সিলেট নগরের পানির মূল্য বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণের হার হচ্ছে- আবাসিক সংযোগে প্রতিমাসে আধা ইঞ্চি ডায়ামিটারের (ব্যাস) লাইনে বিল ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা, পৌনে এক ইঞ্চি ব্যাসের লাইনে বিল ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা এবং এক ইঞ্চি ব্যাসের লাইনে ১ হাজার টাকার পরিবর্তে দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি সংযোগে আধা ইঞ্চি ব্যাসের লাইনে মাসিক বিল ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, পৌনে এক ইঞ্চি ব্যাসের লাইনে ৭০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বাড়ানো হয়। এছাড়া- এক ইঞ্চি ব্যাসের লাইনে বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে মাসিক বিল দেড় হাজারের পরিবর্তে ২ হাজার ২০০ টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা এবং সরকারি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়।
মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সিলেটের সিনিয়র কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মখলিছুর রহমান কামরান জানিয়েছেন, ‘যৌক্তিক হারে নগরে পানির বিল বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় কোনো কাউন্সিলরই এ ব্যাপারে দ্বিমত করেননি কিংবা কেউ আপত্তি করেননি।’ সিটি করপোরেশনের পানি শাখার প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সুবহান জানিয়েছেন, মাসিক সভার সিদ্বান্তের আলোকে জুলাই থেকে বর্ধিত হারে পানির বিল করা হচ্ছে। নগরবাসীর কাছে এখন বিল পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের সিদ্বান্তক্রমে সেটি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’ এদিকে, বর্ধিত মূল্যে পানির বিল হাতে পেয়ে সিলেট নগরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ইতিমধ্যে এ নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে নগরবাসীর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়- অস্বাভাবিক হারে পানির বিল বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। করোনা মহামারিতে মানুষ যেখানে বিপর্যস্ত, নানাবিধ সংকটে আবর্তিত, সেখানে হুট করে পানির বাড়তি বিল মানুষের বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য তারা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গ্যাস, বিদ্যুৎ গ্রাহক কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব মকসুদ হোসেন জানিয়েছেন- ‘করোনা মহামারির মধ্যে এমনিতেই মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে। এই অবস্থায় গনশুনানি না করে পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং অমানবিক। করোনার যাতাকলের কারণে পানির বিল মানুষের মধ্যে বাড়তি চাপ বলেও নগরবাসী মনে করেন। সিদ্বান্তটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভালো হতো।’
পানির বিল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সিলেটের নয়াসড়কসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ আন্দোলনে নেমেছে। তারা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে বিল বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার নগরীর উত্তর কাজিটুলা, সাপ্লাই এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে। উত্তর কাজিটুলা এলাকার প্রবীণ মুরুব্বি ও ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ূম জানিয়েছেন, ‘কাউকে না জানিয়ে পানির বিল বাড়িয়ে দেয়া সর্ম্পূণ অন্যায়। এ কারণে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এই আন্দোলনের সঙ্গে সকল মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানান তিনি।’ তবে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আগে সিলেটের মানুষ পানির জন্য কষ্ট করতো। এখন আর সেটি হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন প্রতিমাসে কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করছে। পানি উত্তোলনে নিয়োজিত পাম্প চালাতে প্রতি মাসে সিটি কর্পোরেশনকে বিল গুনতে হচ্ছে। এই ভর্তুকি সিটির পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান- ‘অনেকেরই কাছে ১৫-১৬ বছর ধরে পানির বিলের বকেয়া। তারা টাকা দিচ্ছেন না। আবার অনেকেই চুরি করে লাইন নিয়ে অবৈধভাবে পানির সংযোগ নিয়েছেন। এটা কোনো ভাবেই উচিত নয়।’ মেয়র জানান, ‘বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে সিলেটে ফিরে এ নিয়ে আলোচনায় বসবেন। যারা আন্দোলন করছেন, তাদের অনেকেই অবৈধভাবে লাইন নিয়েছে, আবার বকেয়াও রেখেছেন। সব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মেয়র।’
সংবাদ সূত্রে : মানবজমিন