বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: শত বছর আগে নির্মিত হয়েছিল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার অভ্যন্তরে কুশিয়ারা নদীর উপর ৪২ নম্বর রেলসেতু। শুরুতে পুরো সেতু পিঞ্জিরায় বেষ্টিত থাকলেও দীর্ঘ দিন সংস্কারহীন থাকায় ভেঙে পড়েছে সেতুর বেশিরভাগ অংশের পিঞ্জিরা। শুধু মধ্যখানে একসময়কার সাক্ষী হিসেবে যেন রয়ে গেছে সামান্য পিঞ্জিরার বেষ্টনি। সেই সাথে স্লিপারগুলো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। এমন অবস্থায় ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
কেবল তাই নয়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের অন্যতম পুরোনো রেললাইন সিলেট-আখাউড়া রেলপথ সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও স্টেশন থেকে ঢাকা অভিমুখী কুলাউড়ার ভাটেরা স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। রেললাইনের এই অংশে ক্লিপ-হুক, নাটবল্টু চুরি, স্লিপার পচে যাওয়া, স্লিপারের হুক উঠে আসা, লাইনের নিচের মাটি ও পাথর সরে যাওয়া নিয়মিত ঘটনা। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুতিও নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ঢাকা ও সিলেটের পথে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বেশি ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা।
তবে রেলওয়ে সিলেটের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেছেন, টেন্ডার হয়ে গেছে। ধাপে ধাপে চলছে সংস্কার কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই রেলপথে ব্রিটিশ আমলের তৈরি রেল সেতু ও কালভার্টগুলোর উপর জরাজীর্ণ কাঠের স্লিপারের সঙ্গে পেরেক দিয়ে বাঁশের ফালি স্থাপন করা হয়েছে অনেক জায়গায়। এর উদ্দেশ্য স্লিপারগুলো ধরে রাখা। কিন্তু সামান্য চাপেই বাঁশের ফালি ভেঙে যাওয়ার কথা। এই রেলপথের ভাটেরা থেকে মোগলাবাজার রেলস্টেশন পর্যন্ত কয়েক সহস্রাধিক ক্লিপ-হুক গায়েব হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় তার দিয়ে রেললাইনের জয়েন্টে নাট বেঁধে রাখা হয়েছে। রেলপথ থেকে প্রতিনিয়ত এসব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে।
রেলপথের এই অংশের কোনো কোনো স্থানে এক সঙ্গে সাত-আটটি হুকবিহীন অবস্থায় লাইন পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, একসময় রেল কর্তৃপক্ষের মোটর ট্রলিতে করে লাইন পরীক্ষা বা নজরদারি কার্যক্রম চালাতেন রেলওয়ের কর্মচারীরা। এখন এই নজরদারি করা হয় না। চরম গাফিলতি দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, কুশিয়ারা নদীর উপর শত বছরের পুরনো ফেঞ্চুগঞ্জ রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নেই কোনো সংস্কার। সেতুর উভয় পার্শ্বে সতর্কতামূলক সর্বোচ্চ গতিবেগের সাইনবোর্ড থাকলেও গতি নিয়ন্ত্রণ না করার অভিযোগ আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর চালকদের বিরুদ্ধে। ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলসেতুর মধ্যভাগে সেফটি পিঞ্জিরা থাকলেও বাজারের উপরিভাগ ও অপর প্রান্তে কোনো সেফটি পিঞ্জিরা নেই। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুতে কোনো ট্রেন দুর্ঘটনায় পতিত হলে এর ভয়াবহতা অকল্পনীয় হবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
রেল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ওই সেতুর উপর দিয়ে আন্তঃনগর ও লোকাল ১৬টি ট্রেন চলাচল করে। সূত্রটি আরও জানায়, ২০০৯ সালে সেতুর পিলারে ফাটল দেখা দিলে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ রেখে ওই সময় সেতুর পিলার মেরামত করা হয়। ওই বছরের ২৬ অক্টোবর জরুরিভিত্তিতে সেতুর আংশিক মেরামত করা হয়। ব্রিটিশ প্রযুক্তিতে নির্মিত ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুর স্থায়িত্বের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ যাওয়ায় সঙ্গত কারণেই এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম এই সেতুর সংস্কার নিয়ে আর কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।
তবে রেলওয়ে সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি এ পথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সীমিত সম্পদ সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে রেলপথের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। আগের তুলনায় রেলপথ এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে এবং কাজ চলমান। আগামীতে আরও কাজ করা হবে।
সূত্র : নয়া শতাব্দী