বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট বিভাগের চার জেলার স্কুল ও কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনতে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনটি জেলার ৩ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে তা পূর্ণাঙ্গ নয়। আর সুনামগঞ্জ জেলায় এখনো কোনো তালিকাই প্রস্তুত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তুত করা শিক্ষার্থীদের তালিকা গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আইসিটি বিভাগে তালিকা পাঠানোর পর সেটি জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপে সংযুক্ত করা হবে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবে। তবে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরুর বিষয়ে এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে বিভাগে টিকা কার্যক্রম বিলম্ব হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা।
গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ শিক্ষার্থীকে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হয়নি। পরবর্তী সময়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের (১২-১৭ বছর) টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ সোমবার সকালে ‘সব শিশু টিকা নেবে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে’ প্রতিপাদ্যে শুরু হয়েছে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম। রাজধানীতে সকালে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের প্রায় ৩ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা ও জন্মনিবন্ধন নম্বর জটিলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠানো সম্ভব হয়নি। আবার অনেক শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম থাকলেও জন্মনিবন্ধনের নম্বরে জটিলতা রয়েছে। সেগুলো জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে পাঠানো হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জ জেলার তালিকা প্রস্তুত হয়নি। ২৩ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুতের শেষ দিন থাকলেও, পরবর্তী সময়ে এক সপ্তাহ বর্ধিত করা হয়। এরপরও বিভিন্ন জটিলতার কারণে তালিকা সম্পন্ন করা যায়নি।
সূত্র জানায়, সিলেট জেলা ও মহানগরের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৯২ হাজার ১৫৯ জনের তালিকা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৯ জন স্কুলশিক্ষার্থী ও ২৯ হাজার ২৯০ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। হবিগঞ্জ জেলার ৫৮ হাজার স্কুলের শিক্ষার্থী ও ১২ হাজার মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। মৌলভীবাজারের ৬৮ হাজার স্কুলের শিক্ষার্থী ও ১২ হাজার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। আবার অনেকের থাকলেও সেটি কার্যকর নয়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে যাদের সনদ রয়েছে, তাদের এবং যাদের সনদ নেই, তাদেরও তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে। আবার যাদের তালিকা হয়নি, তাদেরও পর্যায়ক্রমে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সোমবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আলোচনার পরে আমরা শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে পরিকল্পনা জানতে পারব।’
সিলেট বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর কবীর আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা সভা করে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করবেন। পরে তাঁদের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম নেওয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টিকাকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, করোনা টিকার জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংবলিত বিশেষায়িত কেন্দ্রের প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো কেন্দ্রই প্রস্তুত নেই।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তাঁরা বলতে পারছেন না কবে নাগাদ শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে সেগুলো নিবন্ধনের পর্যায় পর্যন্ত আনা একটি সময়সাপেক্ষ ও লম্বা প্রক্রিয়া। সেগুলো শেষ হলেই আশা করছেন নির্দেশনা আসবে। নির্দেশনা আসার পরপরই তাঁরা কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
তথ্য সূত্রে : প্রথম আলো