Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-11-18T18:39:48Z
গোলাপগঞ্জলিড নিউজ

গোলাপগঞ্জে আ’লীগের প্রার্থী বাঁছাই সম্পন্ন : স্বতন্ত্রের ব্যানারে মাঠে বিএনপি জামাত

বিজ্ঞাপন

জাহিদ উদ্দিন : গোলাপগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতিকে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। তবে বিএনপি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্রের ব্যানারে তাদের একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। একই পথে হাটছেন জামাত সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তারাও স্বতন্ত্রের ব্যানারে ইউপি নির্বাচনে মাঠে থাকার আভাস দিচ্ছেন। 

বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, কেউ নির্বাচন করলে তো আর ঠেকানো যাবে না। তবে- দলীয় প্রতীকে তাদের নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তাদেত নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অংশ নিবেন না বলেও জানান তারা। গোষ্ঠী কিংবা এলাকাভিত্তিক সমর্থনের কারণে অনেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার অনেকে বিগত দিনে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান থাকায় মাঠ ছাড়ছেন না অনেকেই। 

ইতিমধ্যে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন। এই ধাপে গোলাপগঞ্জের ১১টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। নির্বাচনি মাঠে প্রার্থীরা কিছুটা নিরব প্রচারণা করলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রচার প্রচারণায় সরব হয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এ উপজেলার দু একটা ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনুষ্ঠানিক প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন। ফেস্টুন ও ব্যানার টানিয়ে জানান দিচ্ছেন প্রার্থী হওয়ার। 

এদিকে গোলাপগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ তাদের নৌকার একক প্রার্থী বাঁছাই সম্পন্ন করেছে। বাকি ৬টি ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোটে যে প্রার্থী প্র‍থম হয়েছেন তার নাম কেন্দ্রে প্রথমে রাখা হবে। এরপর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন তাদের নাম যথাক্রমে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। 

নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাঁছাই উপলক্ষে
গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা অডিটোরিয়ামে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দীন খান। 

যাদের একক নাম কেন্দ্রে পাঠানো তারা হলেন ১নং বাঘা ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুস সামাদ, ২নং সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা তমজ্জুল আলী তুতা মিয়া, ৪নং লক্ষীপাশা ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মাহমুদ চৌধুরী, ৭নং লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে উপজেলা শ্রমীক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম খান ও ১১নং শরীফগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা এম এ মুমিত হীরা। 

বাকি ৫টি ইউনিয়নে যাদের নাম কেন্দ্রে প্রথমে পাঠানো হবে তারা হলেন, ৩নং ফুলবাড়ি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হানিফ খান, ৫নং বুধবারী ইউনিয়নে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হালিমুর রশিদ রাপু, ৬ নং ঢাকাদক্ষিণ ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ৯নং পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হাছিন আহমদ মিন্টু, ১০নং উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলিম উদ্দিন বাবলু। এই ৬টি ইউনিয়নে এই প্রার্থীদের সাথে তৃণমূলের ভোটে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদেরও নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে। 

শুধু ৮নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নে দুজন প্রার্থী কাউন্সিলরদের সমান ভোট পাওয়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক রুমেল সিরাজ, সদস্য সেলিম আহমদের নাম এক নাম্বারে ও দ্বিতীয় নাম্বারে ব্রাজিল যুবলীগের আহবায়ক আবু সুফিয়ান উজ্জলের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানা যায়। 

গত নির্বাচনে গোলাপগঞ্জ উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ। বর্ধিত সভায়ও জেলা ও উপজেলা নেতাকর্মীরা এমন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। 

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফুর রহমান জানান, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাঁছাই তৃণমূলের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সবকটি ইউনিয়নে এবার একক প্রার্থী দিবে৷ তবে কেউ দলের নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী হলে তাকে দলের শাস্তি ভোগ করতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামীলীগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। একইভাবে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দল কঠোর এমনটা জানালেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদও। 

জানা যায়, গোলাপগঞ্জে বিগত নির্বাচনে ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকার ভরাডুবি ঘটে। আর এই ভরাডুবির পেছনে একমাত্র কারণ ছিল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ওই নির্বাচনে মাত্র ২টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগ প্রার্থী, ২টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, ৪টি ইউনিয়নে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী, ১টি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ১টি ইউনিয়নে জামাত সমর্থিত প্রার্থী এবং একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। 

তবে এবার আওয়ামীলীগের সবকটি ইউনিয়নে একক প্রার্থী থাকার খবরে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে দলটি৷ শেষ পর্যন্ত একক ইউনিয়নগুলোতে একক প্রার্থী থাকলে হাতছাড়া ইউনিয়নগুলো হয়তো ক্ষমতাসীন দলের দখলে আসতে পারে। 

এদিকে বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে তাদের ঘরোনার প্রার্থী। বিএনপি পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলেরও প্রার্থী স্বতন্ত্রের ব্যানারে ভোটের মাঠে থাকবে। 

ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছাড়াও বিএনপির ঘরানার প্রার্থীর মধ্যে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন, ১নং বাঘা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ছানা মিয়া, আবুল কালাম, সেলিম আহমদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আবুল হাসনাত, ২নং সদর ইউনিয়নে বিএনপির ঘরানার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরী, মওদুদ হোসেন চৌধুরী সুমন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। 

৩নং ফুলবাড়ি ইউনিয়নে বিএনপির ঘরানার প্রার্থী হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট মামুন আহমদ রিপন এবং জামাতের ঘরানার প্রার্থী মো: ইসমাইল হোসেন, এমরান আহমদ। 

৪নং লক্ষিপাশা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা মাহতাম উদ্দিন জেবুল ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম তুহিন। তবে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী হয়ে মাঠে থাকবেন কি না তা বুঝা যাবে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত। 

৫নং বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বিএনপির ঘরানার প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন হেলাল উদ্দিন ও দবিরুল হক। জমিয়তের মাওলানা খলিলুর রহমান ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হিসেবে শাহিন আহমদের নাম শুনা যাচ্ছে।তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও ভোটের মাঠে থাকতে নাও পারেন।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আতিকুর রহমান। 

৬নং ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপি ঘরানার প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নোমান উদ্দিন মুরাদ, জাপার মজির উদ্দিন চাকলাদার ও জামাতের ঘরানার প্রার্থী এস এম আব্দুর রহিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বদরুল ইসলাম জামালের নাম শুনা যাচ্ছে। 

৭নং লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের জাপার ঘরানার প্রার্থী খলকুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ওজি মোহাম্মদ কাওছার। ৮নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নে বিএনপির ঘরানার প্রার্থী সৈয়দ রেজাউল করিম আলো। ৯নং পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নে বিএনপির ঘরানার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রুহেল আহমদ, ইমরানুল ইসলাম তানু, জামাতের ঘরানার প্রার্থী রাসেল আহমদের নাম শুনা যাচ্ছে। ১০ নং বাদেপাশা ইউনিয়নে বিএনপির ঘরানার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, জামাতে ইসলামীর ঘরানার প্রার্থী প্রভাষক জাহিদ হোসাইনের নাম শুনা যাচ্ছে। ১১নং শরীফগঞ্জ ইউনিয়নে বিএনপির ঘরানার প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, জামাতের মাওলানা আতিকুর রহমান। এ ১১টি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ তাদের নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষণা করবে আগামী ১৯ নভেম্বর শুক্রবার। আর এই ঘোষণা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ থেকে করা হবে। 

উল্লেখ্য, তফসিল অনুযায়ী চতুর্থধাপে গোলাপগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিল ২৫ নভেম্বর। বাছাই ২৯ নভেম্বর। আপিল ৩০ থেকে ২ ডিসেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৬ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ৭ ডিসেম্বর।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ