বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক : আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রবিবার (১০ অক্টোবর) দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।
তবে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী নিয়ে সিলেটজুড়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এ ইউনিয়নে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠেছে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ইকবাল ‘ম্যানেজ’ করেছেন বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে রবিবার থেকে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।
এই অবস্থায় তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করে সকল অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বললেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের মেসার্স আব্দুস সালাম ব্রিকস-এর স্বত্বাধিকারী ও খাগাইল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ইকবাল হোসেন ইমাদ।
সোমবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন ইমাদ দাবি করেছেন, তার নামের সাথে মিল থাকা ইমাদ নামের অন্য ব্যাক্তি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। ওই ইমাদ একটি ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে চাকরি করছেন। নামের সাথে মিল থাকায় প্রতিপক্ষ ফেসবুক পেজে তার ছবি লাগিয়ে ওই ইমাদের কার্যক্রম তুলে ধরে মিথ্যা অপপ্রচার করছে। তিনি বা তার পরিবার কোনোদিন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না বা কোনোদিন জড়িত থাকার সম্ভাবনা নেই।
লিখিত বক্তব্যে ইমাদ জানিয়েছেন, নৌকা প্রতীক না পেয়ে তাকে প্রতিপক্ষ তাকে জামায়াত-শিবির বানানোর চেষ্টা করছে। ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করে ২০০৭ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ চলে যান। ২০০১৬ সাথে দেশে এসে ব্যবসা শুরু করেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন। দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন কার্যনির্বাহী সদস্য। দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের ১৮ ভোটের মধ্যে ১১টি ভোট তিনি পান। দল তাকে নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনীত করেছে। কিন্তু নির্বাচন ও মনোনয়নকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষ তার ছবি ব্যবহার করে ইকবাল হোসেন ইমাদ নামে ফেসবুক পেজ খুলে।
মূলত একই ইউনিয়নের মাওলানা আব্দুন নুরের ছেলে ইকবাল হোসেন ইমাদ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি উপজেলা শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। প্রতিপক্ষ সেই ইমাদের বিভিন্ন স্ট্যাটাস স্কিনশর্ট করে তার নামের সাথে জড়িয়ে অপপ্রচার করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমাদ বলেন, আমি জামায়াত-শিবির করলে আমার বিরুদ্ধে মামলা থাকত। কিন্তু কোনো মামলা নেই। আমার কিছু আত্মীয় আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়ার রাজনীতির সাথে জড়িত। এসব সংগঠন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই সমর্থন দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি বিদেশ ঘুরেছি। কিভাবে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হয় আমার জানা আছে। নির্বাচিত হলে ইউনিয়নকে আধুনিক করতে সময় লাগবে না। সংবাদ সম্মেল প্রকৃত সত্য যাচাই-বাচাই করে উপস্থাপন করার দাবি জানিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন ইমাদ।
জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর উপজেলা ও জেলার রিপোর্টের ভিত্তিতে নৌকার প্রার্থীদের বাছাই করা হয়েছে। সেখানে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের মেসার্স আব্দুস সালাম ব্রিকস-এর স্বত্বাধিকারী ও খাগাইল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০১০ সাল পর্যন্ত সিলেট সদর উত্তরের শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। এর আগে ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০০৬-০৭ সেশনে কোম্পানীগঞ্জ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে ম্যানেজ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে খোলস পাল্টে হয়ে যান নব্য আওয়ামী লীগ। ২০১০ সালে শিবিরের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চলে যান লন্ডনে। সেখান থেকে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত জামায়াতের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন।
ইকবাল হোসেন ইমাদ নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিগত দিনের সরকারবিরোধী অপতৎপরতার বিষয়গুলো তুলে ধরছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মী। ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে অধ্যাপক গোলাম আযম, একটি নাম, একটি ইতিহাস- বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ইমাদ। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির বিরুদ্ধে ‘সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জামায়াত ইসলামীর’- এমন স্ট্যাটাসও দেন। এছাড়া ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইকবাল হোসেন ইমাদের নেতিবাচক স্ট্যাটাসও সংগ্রহে রেখেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০০৫ সালে সাইফুর রহমান কলেজের শিবিরের সভাপতি ও ২০০৭ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শিবিরের সেক্রেটারির দ্বায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালে সদর উত্তর-এর সেক্রেটারি ছিলেন।