বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে মেলা হবে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডের শাহজালাল উপশহর এলাকায়। তাই ওই এলাকার একটি খেলার মাঠে গত মার্চ মাসে তৈরি করা হয় মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলয়ন। কিন্তু করোনার প্রকোপ আর পরপর লকডাউনের কারণে মেলা করতে পারছিলেন না কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শুরু থেকে এখানে মেলা না করার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী বাধা দিয়ে আসছিলেন।
তবে এসব উপেক্ষা করে দীর্ঘ আট মাস ধরে মাঠটির চারিদিকে টিন দিয়ে ঢেকে বন্ধ করে রেখেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে মেলা ব্যবসায়ীরা মাঠটি দখল করে রেখেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডের শাহজালাল উপশহর। এখানে এ থেকে জে পর্যন্ত ১০ টি ব্লক আছে। এই বল্কগুলোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাস করেন। এই বিশাল জনসাধারণ ও বাচ্চাদের খেলাধুলার কথা চিন্তা করে এই উপশহরের মাস্টার প্ল্যানে, আই ব্লকে একটি খেলার মাঠ রাখা হয়। এই মাঠে প্রতিদিন বিকেলে কয়েকটি গ্রুপে প্রায় শখানেক স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলা করে। পাশাপাশি অনেক বয়স্ক নারী পুরুষ বিকেলে মাঠের পাশে এসে হাঁটেন ও বাচ্চাদের খেলা উপভোগ করে থাকেন।
যদিও খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘনে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় সাজার বিধান আছে। তারপরও এই মাঠে খেলার আয়োজন করায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, গত ৮ মাস ধরে এই মাঠে প্রবেশ করতে পারছেন না এলাকার কেউ। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এখানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প-পণ্য মেলা করা হবে। মেলার আয়োজনে রয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও ব্যবস্থাপনায় থাকবে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস)। এই মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব আছেন মেলা ব্যবসায়ী এম. এ. খান বাবলু।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপশহরের ই-ব্লক সংলগ্ন খেলার মাঠটির চারিদিকে টিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ভিতরে তৈরি হচ্ছে দোকান কোঠা। ক’জন শ্রমিক কাজ করছেন সেখানে। বাইরে একটি ব্যানার লাগানো রয়েছে, যাতে লেখা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শীগ্রই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প-পণ্য মেলা ২১২১। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োজনে ও ব্যবস্থাপনায় থাকবে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস)।
এদিকে খেলার মাঠ থেকে মেলার স্টলের অবকাঠামো সরাতে গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা ও শাহজালাল উপশহর একাডেমির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ ওয়াদুদ।
তিনি বলেন, গত মার্চে ওই একাডেমি খেলার মাঠে এক মাসের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা করার জন্য তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) অনুমতি দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। তবে মেলার সময় শেষ হলেও একাডেমি খেলার মাঠে এখনো রয়ে গেছে মেলার স্টলের অবকাঠামোগুলো। এ অবস্থায় মাঠে থাকা টিনশেড, সরঞ্জামাদিসহ অন্য অবকাঠামো সরাতে সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি তাই আমি হাইকোর্টে রিট করি। এই রিটের প্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর একাডেমি খেলার মাঠে মেলার জন্য তৈরি সব ধরনের অবকাঠামো ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের মেয়র, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অ্যাডভোকেট এম এ ওয়াদুদ বলেন, মাঠের দু’প্রান্তে দুটি মসজিদ একটি স্কুল রয়েছে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করেন। এখানে মেলা হলে গানবাজনা হবে। মসজিদে মুসল্লিদের যাতায়াতে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক মেলা বন্ধ হলে এলাকায় কোভিড-১৯ এর ঝুকি বেড়ে যাবার শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের স্বার্থে বাণিজ্যিক মেলা না বসানোর জন্য দাবি এলাকাবাসীর।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছালেহ আহমদ সেলিম বলেন, খেলার মাঠে মেলা না করার জন্য প্রথম থেকেই এলাকাবাসী আমার কাছে অভিযোগ দিচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে কথা বলায় মেলার আয়োজনকারীরা মিথ্যা অভিযোগে আমরা নামে মামলাও করেছে। গত কয়েকদিন আগে খেলার মাঠে মেলার জন্য তৈরি সব ধরনের অবকাঠামো ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এই নির্দেশনার কপিটিও আমি পেয়েছি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। এসব অবকাঠামো সরানোর মত সামর্থ্য আমার একার নেই। এখানে কিছু করতে পারলে সেটা সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসক করতে পারবেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে সিসিক মেয়রের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী খেলার মাঠ থেকে মেলার স্টলের অবকাঠামো সরাতে কাজ চলতেছে।
এ ব্যাপারে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব থাকা মেলা ব্যবসায়ী এম. এ. খান বাবলু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এই মেলা। যেহেতু জন্ম শতবার্ষিকী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে, তাই এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে। এটি হাউজিং এলাকার জায়গা তাই মেলা করার জন্য গৃহায়ান মন্ত্রণালয় আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। হাইকোর্টে এ ব্যাপারে রিট হয়েছে শুনেছি। কিন্তু অবকাঠামো সরানোর জন্য আমাদের কাছে কোনো নোটিশ আসেনি।
এ ব্যাপারে আয়োজক বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)সিলেটের ডিজিএম (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. সোহেল হাওলাদার বলেন, আমরা আয়োজক হলেও মূলত আমরা শুধু মেলা করার অনুমতি দেই। তবে এ মেলার ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। এটা নিয়ে আগামি ১০ তারিখে সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা কেউই আইনের উর্ধ্বে নই। তাই কোর্ট যে রায় দিবে তাই আমরা মেনে নেব। তিনি বলেন, আমরা উদ্যোক্তাদের কল্যাণের জন্য মেলা করি। কিন্তু মেলার স্থান আমরা নির্ধারণ করি না। তবে মেলার স্থান যেন ভেজালমুক্ত হয় এবং এতে যে কারো অসুবিধা না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে মেলার স্থান নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাই এ মেলাও স্থানীয়দের এমন কিছু করে করা হবে না।
সূত্র : সিলেট টুডে টোয়েন্টিফোর