বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: প্রায় এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের লিফটে উপরে উঠছিলেন স্থানীয় সফর আহমদের স্ত্রী। এমন সময় লিফট থেকেই তার স্ত্রীর মোবাইল ও পার্টস চুরি হয়ে যায়। পার্টসের ভেতরে ছিল ৮ হাজার টাকা। পরে সফর আহমদ বিষয়টি পুলিশকে জানালেও চোর ধরা পড়েনি। শুধু এই ঘটনাই নয়; সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন প্রতিদিনই ঘটছে চুরির ঘটনা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিদিনই রোগীর মোবাইল, টাকা চুরির ঘটনা ঘটছে। বাইরেও চোর সিন্ডিকেটের হাতে সর্বস্ব হারাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
প্রায় সময় চোর ধরে পুলিশকে দেয়া হলেও তাদেরকে চালান দেয়া হয় না। একের পর এক চুরির ঘটনায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা আতঙ্কে আছেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সিলেট বিভাগের চিকিৎসার সর্বোচ্চ স্থান এটি। শুধু সিলেটের রোগীই নয়; প্রতিদিন হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারের জরুরির রোগীরা চিকিৎসা নিতে এখানে আসেন। এ কারণে সব সময় রোগীতে ভর্তি থাকে ওসমানী হাসপাতাল। ৯০০ শয্যার বিপরীতে এ হাসপাতালে প্রতিদিন অতিরিক্ত আরও ১ হাজার থেকে দেড় হাজার বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে অনেক ওয়ার্ডের মেঝেতেও রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। ফলে ওসমানী মেডিকেলের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে যখন কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে, তখন চোর সিন্ডিকেট নিয়ে অস্বস্তি বিরাজ করছে। হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে চোর সিন্ডিকেটের সমান আধিপত্য। এ নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় না। এ কারণে প্রতিনিয়তই চুরির ঘটনা ঘটছে। রোগী কিংবা তাদের স্বজনরাও চোর দৌড়ান হাসপাতালের ভেতরে। এ নিয়ে মুমূর্ষু রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন। হাসপাতালের কর্মচারী ও রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন- হাসপাতালের ১,৩, ৬, ১১, ১৫, ২৬ নম্বরসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে বেশি চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়া এক্সরে বিভাগেও চুরির ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। হাসপাতালে রাতের বেলা টহলে থাকে পুলিশ। কিন্তু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।
সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে; ৪-৫ মাস আগে মেডিকেল কলোনির বাসিন্দা ও ব্যাংক কর্মচারী শামীম আহমদের মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। কোয়ার্টারের ভেতরে চুরির ঘটনায় শামীম আহমদ থানায় জিডি করলেও এখনো মোটরসাইকেলের খোঁজ মেলেনি। কয়েক মাস আগে নার্সিং কলেজের নতুন হোস্টেলের ভেতর থেকে কয়েক লাখ টাকার বৈদ্যুত্যিক তার চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ওই হোস্টেলের বাইরে প্রতিদিন বহিরাগতরা গিয়ে দলবেঁধে ইয়াবা সেবন করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রায় দুই মাস আগের ঘটনা। রোগীর স্বজন এক দম্পতি সিএনজি অটোরিকশা যোগে কলেজ গেটের দিকে ঢোকার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে ওই দম্পতির সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। প্রায় তিন মাস আগে কলেজের এক কর্মচারীর মা ও ভাইকে জিম্মি করে স্বর্ণের চেইন ও টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
মেডিকেল এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সোহেল ও জমশেদের নেতৃত্বে মেডিকেল এলাকায় একটি চোর ও ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে তারা মেডিকেল এলাকায় এসব কর্মকাণ্ড ঘটায়। দুই মাস আগে র্যাব ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল। এছাড়া, ওসমানী মেডিকেলের চোর সিন্ডিকেটের সর্দার হচ্ছে আলোচিত পপি বেগম। প্রায় দুই বছর আগে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের হাতে পপি তার এক সহযোগীসহ হাতে ধরা পড়ে কারাবরণ করেছে। এরপর কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেও পপির সহযোগীরা এখন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মেডিকেল এলাকায় পপির নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের চোর সিন্ডিকেট রয়েছে। বর্তমানে পুলিশের সঙ্গে পপি ও তার সিন্ডিকেটের ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পপি মাস খানেক মাদকসহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। কারাবরণের পর ফের বেরিয়ে এসে আবারো মেডিকেল এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেট নিয়ে সবার অভিযোগ। কিন্তু প্রতিজন দালালের কাছ থেকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা আদায় করে পুলিশ। যারা পুলিশকে টাকা দেয় তারা মেডিকেলে ঢুকে অবাধে দালালি করতে পারে। আর যারা টাকা দেবে না তাদেরকে মেডিকেল এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয় না।
মেডিকেল এলাকার কয়েকজন ফার্মেসীর মালিক জানিয়েছেন, পুলিশকে টাকা না দেয়ার কারণে গত সপ্তাহে পুলিশ মিসবাহ উদ্দিন মুন্না, ইব্রাহিম আলী মামুন নামের দুই দালালকে গ্রেপ্তার করে ৯ মাস আগের আম্বরখানার একটি ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে চালান দিয়েছে। একইভাবে গত জানুয়ারি মাসে স্টেডিয়াম এলাকার একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় আসামি করা হয়েছে জাহিদ খান ও আলমগীরকে। পুলিশের চাহিদামতো টাকা না দেওয়ার কারণেই তাদের আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল কিংবা আশপাশের এলাকায় চুরির ঘটনা অস্বীকার করেছেন মেডিকেলের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জয়নাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, আগের চেয়ে এলাকার পরিবেশ ভালো। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চুরির ঘটনায় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।